আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
চট্টগ্রামের নগরীর চকবাজার এলাকার কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর শুধুমাত্র বদলি করেই দায় সারছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। রোববার (০১ জানুয়ারি) বিকেলে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদকে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। তাৎক্ষণিক তাকে দায়িত্ব থেকেও সরানো হয়নি।
এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ছবি সত্যায়িত করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এনিয়ে তৎকালীন মেয়র মনজুর আলমকে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমেদকে ওই বছরের ১৭ জুলাই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একই সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় বিভাগীয় মামলা। কিন্তু দুই বছর পর অভিযোগকারী ছাত্রী বিদেশ চলে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাকরি ফিরে পান তিনি। দায়িত্বে ফিরে আবারো ছাত্রীদের ম্যাসেঞ্জারের কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়েও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।
এমন গুরুতর অভিযোগের পর ওই শিক্ষককে সাময়কি বরখাস্ত বা ওএসডি না করে অন্য বিদ্যালয়ের বদলির মাধ্যমে দায় সারায় সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। তবে ময়ের বলছেন তার বদলি আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “বদলি করে তার পিঠ বাঁচানোর একটি পথ করে দেওয়া হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা যেতো। কিন্তু আমরা দেখে এসেছি এক্ষেত্রে একটি উদাসীনতা সবসময় কাজ করে এসব প্রতিষ্ঠানে। ফলে এমন অপরাধে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে অপরাধীরা।”
এ বিষয়ে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের সারাদেশকে বলেন, “অভিযুক্ত শিক্ষককের বদলি আদেশটিও প্রত্যাহার করা হবে। তাকে এখন কোন দায়িত্বে রাখা যাবে না। ওএসডি করা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে।”
গত রোববার (০১ জানুয়ারি) সকালে নগরের চকবাজারে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকাল থেকে বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিবাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে উপর্যপুরি বই খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ছুঁড়ে মারতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করে তদন্তের আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, শিক্ষক আলাউদ্দীন বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের হয়রানি করে থাকেন। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজও দিতেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন।