আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
দেশের পার্বত্য অঞ্চলের কফি চাষ বাণিজ্যিকভাবে সাড়া জাগাচ্ছে। পাহাড়ে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে দীর্ঘ দুুই যুগ আগে শুরু করা কফি চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাণিজ্যিক উৎপাদনে বান্দরবানে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন চাষীরা। ইতিমধ্যে হর্টিকালচার সেন্টারে উন্নতমানের কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড়ে উৎপাদিত হচ্ছে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দু’জাতের কফি। এখানে উৎপাদিত কফি চামড়া (খোসা) বাদ দিয়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকায়। চামড়া বা খোসাসহ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে মান ভালো হলে খোসা ছাড়া কফি কেজিতে ৪০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। পাহাড়ে উৎপাদিত কফি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
স্থানীয় চাষি এ্যাম্পু পাড়ার মেনরু ম্রো ও সাক্য ম্রো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগানে কফির ফলন ভালো হয়েছে। তবে গাছে পোকার আক্রমণের ফলের ক্ষতি হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় বিক্রি করে ভালো দামও পাওয়া যাবে। উৎপাদিত খোসা ছাড়া কফি প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় এবং খোসাযুক্ত কফি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় উদ্যোক্তা সিইয়ং খুমী বলেন, চারা রোপণের তিন বছরের মাথায় কফি উৎপাদিত হয়। একেকটা কফি গাছ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু শুরুর দিকে অনেক চাষি আগ্রহ দেখায়নি। চারা লাগিয়েও লাভ হবে না মনে করে পরিচর্যার কিছুই করেনি অনেকে। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বদলে গেছে। চাষিদের আগ্রহে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়ছে বান্দরবান জেলায়। চারা লাগানোর পর বাগান পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহের পর কফি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। উৎপাদিত কফির প্রক্রিয়াজাতকরণে ছোটখাট কারখানা করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে।
বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, কফি চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হর্টিকাল সেন্টারের উদ্যোগে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি ছয়টি উপজেলায় তালিকাভুক্ত চাষিদের নতুন করে দেড়শটি করে কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে। লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় কফি চারার নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে।
এখানে উৎপাদিত অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দু’জাতের কফি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ছয়শ কৃষকের মাধ্যমে পাহাড়ে সীমিত আকারে কফি চাষ আরম্ভ হয়। তবে দীর্ঘ তেইশ বছর পর পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষে সাড়া জাগাচ্ছে। বর্তমান বান্দরবান জেলায় সহস্রাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। চলতি বছর জেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ১৩৪ হেক্টর বেশি। গতবছর উৎপাদিন হয়েছিল ৯০ মেট্রিক টন কফি। এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ১শ ২০ মেট্রিক টনের বেশি। ছয়টি উপজেলায় ৬৫টি বাণিজ্যিক প্রদর্শনী বাগান রয়েছে।