আজকের সারাদেশ রিপোর্ট
গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট। বিছানার ওপর শরীরটা এলিয়ে দিয়ে মোবাইলে ডুবে ছিলেন টিকটকে। পাশেই প্লেটে পেঁপের টুকরো। এতটুকু হলে হয়তো কিছু বলার থাকত না কারও। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল তাঁর দুই পা যে তুলে দিয়েছেন সংগঠনটির আরেক দুই নেতার গায়ের ওপর। সেই দুই নেতাও সভাপতির পা মালিশ করে দিচ্ছিলেন মনের আনন্দে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই বলছেন- এ যেন সেই পুরোনো দিনের রাজা-বাদশাহ বিলাসীজীবনের দৃশ্য।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নিয়াজ আবেদীন পাঠান ছবিটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে লেখেন-‘যোগ্যতার চেয়ে বেশি কিছু পেয়ে গেলে হয়ত এমনি হয়.
আমরা গর্বিত এমন সভাপতি পেয়ে। সেখানে রাত ৮টা পর্যন্ত ৬৭ জন মন্তব্য করেছেন। এরপর ছবিটি ছড়াতে শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের অনেকেই ছবিটি শেয়ার করেছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির মতো বড় পদে থাকা একজনের এমন অরূচিকর কাজ নিয়ে সমালোচনা করতে থাকেন। অবশ্য রুবেল শুরু থেকেই বিতর্ককেই নিজের সঙ্গী বানিয়েছেন।
আজকের সারাদেশ সভাপতির পা মালিশ করে দেওয়া দুজনের পরিচয়ও বের করেছে। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়শাখা ছাত্রলীগের উপ কর্মসূচি বিষয় সম্পাদক শামিম আজাদ ও উপ ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক শফিউল ইসলাম। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছেন, এই দুজনকে পদ দেওয়ার ক্ষেত্রে রুবেলের ভূমিকা ছিল। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে তাঁরা রুবেলের কথা অনুযায়ী প্রতিদিন তাঁর কক্ষে গিয়ে কখনো পা টিপে দেন, কখনো মালিশ করে দেন। তবে কেউ একজন সেই দৃশ্যটি গোপনে ক্যামরায় ধারণ করলে বিষয়টি সামনে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ সেশনের শিক্ষার্থী রুবেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে এর মধ্যে পার করে ফেলেছেন ১৭ বসন্ত। গত ৫-৭ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ শিক্ষকই ছাত্রলীগের এ নেতার চেয়ে বয়স এবং ব্যাচের দিক থেকে জুনিয়র। এতকিছুর পরও তিনি এখনো নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবেই পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের তৃতীয় তলায় ৩১১ নম্বর কক্ষে থাকেন রুবেল। তিনজনের আসনের কক্ষটি আপাতত একাই দখল করে আছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কক্ষের দরজায় বড় করে লেখা আছে- ‘রেজাউল হক রুবেল, সভাপতি, চবি ছাত্রলীগ’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা আজকের সারাদেশকে বলেন, বর্তমানে নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ তার ৮/১০ বছরের ছোট। সেজন্য নিজের মতো করে অধীনস্ত নেতাকর্মীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা না থাকায় সেশন গ্যাপ তৈরি হয়েছে। কেউই ছাত্র থাকা অবস্থায় নেতৃত্বের সুযোগ পান না। তাই ছাত্রলীগের অনুসারীরা ধরেই নিয়েছেন নেতৃত্বে আসতে হলে ক্যাম্পাসে ৮-১০ বছর থাকতে হবে কমপক্ষে। আমাদের এ জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনা উচিৎ।’
অবশ্য এ বিষয়ে জানতে রেজাউল হক রুবেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাঁর কর্মীরা জানিয়েছেন, ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পরার পর থেকেই রুবেল পরিস্থিতি সামাল দিতে আপাতত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন।
এর আগে অবিবাহিত রুবেলের নারীকে নিয়ে হোটেলে রাতযাপনে যাওয়ার সময়কার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেটি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। এবার ভাইরাল হলো কর্মীদের দিয়ে পা মালিশের ছবি। এবার অবশ্য ছাড় দিতে চান না নেতা-কর্মীরা। তাঁরা রুবেলের পদত্যাগ চান!