আজকের সারাদেশ রিপোর্ট:
চট্টগ্রামে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় জসিম উদ্দিন চৌধুরী নামে এক দলীয় কর্মীকে চড় মারার পাশাপাশি জীবিত মাটিতে পুতে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন। একজন সংসদ সদস্যের মারমুখী ভঙ্গি ও অশালীন ব্যবহারের কারণে নিন্দার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, মক্কা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন নদভীকে বলছেন, ‘যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আপনাকে দিতে হবে, তবেই রোড মজবুত হবে। তারা (ইঞ্জিনিয়ার) আসে কিন্তু যে পরিমাণ দরকার সেই বরাবর দেয় না।’ এরপরেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এমপি নদভী। তোকে আমি চড় মারবো বলতেই সজোরে চড় মেরে বসেন জসিম উদ্দিনের গালে। এসময় লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নদভীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নদভী উল্টো তাদেরই ধাক্কা দেন।
এসময় জসিমকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সংসদ সদস্য নদভী বলেন, ‘এখনও মানুষ চিনিসনি। কথা বেশি বলিস! আমি কথা শেষ করেছি? আমি এখন প্রধান প্রকৌশলীর সাথেই কথা বলতাম। আমাকে চিনস নাই, বেয়াদব। আমি এখানে কেন এসেছি, কলা খেতে এসেছি? আমি যা করতে পারবো সেটা তোরা করতে পারবি, তাই না? ফালতু কোথাকার। আমি কতটা রাগী সেটা জানিস না? একেবারে জীবিত পুঁতে ফেলবো। ওমুকের, ওমুক আওয়ামী লীগের নেতা এসব আমার এখানে চলবে না। আমার এখানে চলবে বাস্তবতা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি ২০২২ সালের জানুয়ারির ঘটনা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এক মাস আগে নগরীর টেরিবাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ‘মনে রেখ’ শাড়ীর শোরুমের মালিক আমজাদ হোসেনের আমন্ত্রণে সাতকানিয়া পৌরসভার ছমাদার পাড়ায় তার বাড়িতে দাওয়াতে যান আবু রেজা মুহাম্মাদ নেজামুদ্দীন নদভী। ওইদিন বিকেলে সাতকানিয়ার এওচিয়া গাটিয়াডাঙ্গা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ব্রীজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান এমপি নদভী। টেন্ডার পেয়ে ব্রিজের নির্মাণকাজ করছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা এলডিপির সভাপতি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। ব্রিজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে নিম্নমানের কাজ করায় ঠিকাদার জিয়াউল হক বাবুলের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী প্রবাসী জসিম উদ্দিন। এসময় ঠিকাদার জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে সন্তুষ্ট করতে অভিযোগকারী জসিম উদ্দিনকে চড় মেরে দেন জীবিত কবর দেওয়ার হুমকি দেন এমপি নদভী।
অভিযোগকারী মক্কা আওয়ামী লীগেরর সাবেক সভাপতি প্রবাসী জসিম উদ্দিন সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবিরের ছোট ভাই।
এ প্রসঙ্গে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল আকজের সারাদেশকে বলেন, “২০২২ সালের ইউপি নির্বাচনের এক মাস আগের ঘটনা এটি। ডলু খালের উপর ব্রীজটি নির্মাণের কাজ আমি করেছিলাম। কিন্তু জসিম উদ্দিন সবাইকে বলে বেড়াত, এই ব্রীজ নাকি সে টাকা খেইয়ে অনুমোদন নিয়ে এসেছে। সে এমপির কাছে অভিযোগ করেছিল। আগের রাতে ব্রীজের নামফলক কারা যেন ভেঙে ফেলা হয়। কেউ একজন তখন বলে, জসিমই নাম ফলক ভেঙে ফেলে। এজন্য এমপি সাবেক ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।”
এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য নদভী ও ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১১ মার্চ) স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেন এমপি নদভী। তার বিরুদ্ধে আনেন নানা অভিযোগ। এমনকি এমপিকে বাদ দিয়ে কলেজের ভবন উদ্বোধন (সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের প্রতিষ্ঠিত কলেজের ভবন) করা মানে কেয়ামতের আলামত বলে মন্তব্য করেন নদভী। তার বক্তব্যের ভিডিওটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এরপর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়াসহ একে অপরের দিকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে যাচ্ছেন দুই পক্ষের লোকজন। যার প্রেক্ষিতে নদভীর এই ভিডিওটি নতুন করে সামনে আসে।