আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ডলু নদীতে বালুমহাল থেকে বালু তোলার কারণে নদীর দুই পাড়েই সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। সেই ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হয়ে সব হারিয়েছেন অনেকেই। এলাকাবাসীর বাড়ি-ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। এতে অনেকটাই নদী ভাঙন রোধ পায়। কিন্তু আবারও নতুন করে ভাঙনের দুঃস্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসী। কেননা ডলু বালুমহাল-৪ ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ঘরবাড়ি রক্ষায় এই বালু ইজারা দেওয়া বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, অবিলম্বে জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালুমহাল ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করতে হবে। না হয় গণবিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই নিতে পারব না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর বালু মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্ভল হারিয়ে পথে বসেছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নং মহালের ইজারা বাতিল করে। ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালু মহাল দুটির ইজারা স্থাগিত করে। কিন্তু হঠাৎ জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালু মহাল ৪ ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালি মহালের সঙ্গে। তবে ৩ নম্বর বালুমহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি। তাদের অভিযোগ, ৪ নম্বর বালুমহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তাঁরা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এর ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু মহাল ৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে।
নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালুমহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪ নম্বর বালুমহাল ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার ডলু ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালুমহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।
লেয়াকত আলী বলেন, ডালুর বালি উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হবে। প্রাণহানির আশংকাও রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজীর রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারো মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটিমাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষি জমি। তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪ নম্বর বালুমহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কোন বালুমহাল থেকে যদি বালু উত্তোলনের সুযোগ থাকে তখন সেটি ইজারা দেওয়া হয়। আর যদি কোন মহালে জনগণের অভিযোগ থাকে সেটি আমরা বন্ধ রাখি। ডলু বালুমহালে যদি অভিযোগ থাকে সেটি আমরা দেখব।