আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম নগরীর একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে আবিদা সুলতানা আয়নী। কয়েকদিন আগে তার এক বান্ধবী একটি বিড়ালছানা কিনলে সেও সেটির মায়ায় পড়ে যায়। মাকে জানায় সেই কথা। পাশাপাশি তার সেই মায়ার কথা জানিয়েছিল স্কুলের পাশে বসা স্থানীয় সবজিবিক্রেতা মো. রুবেলকেও। ছোট্ট শিশুটির সেই আবদারে কোথায় তাকে একটা বিড়ালছানা সংগ্রহ করে দেবেন, উল্টো লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে অপহরণ করে বসল সেই সবজিবিক্রেতা। মঙ্গলবার সকালে নারী শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর শরমিন জাহানের আদালতে শিশুটির মায়ের করা মামলারে আবেদনে উঠে এসেছে এসব অভিযোগ।
৮ দিন ধরে মেয়েকে বুকের কাছে না পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন মা। আদালতে মামলা করতে এসে হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ। শুধু বলতে থাকেন, আপনারা আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। মায়ের মামলার আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সরাসরি এজহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আবেদন থেকে জানা যায়, আয়নীর মা চট্টগ্রামে ও বাবা ঢাকার পোশাক কারখানায় কর্মরত আছেন। মা চাকরিতে গেলে শিশুটি তার দাদির কাছে থাকত। অপহরণ হওয়ার কয়েকদিন আগে আয়নী তার মাকে জানায়, তার এক স্কুল বান্ধবী বিড়াল ছানা কিনেছে, সেও কিনবে। পাশাপাশি জানায়, রাস্তায় বসা এক তরকারি বিক্রেতা তাকে আরকজন থেকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দেবে। তবে শিশুটির মা তাকে জানিয়ে দেয়, কারও কাছে যেতে হবে না, বেতন পাওয়ার পর তিনিই কেনে দেবেন। কিন্তু ২১ মার্চ শিশুটি বিকেলে আরবি পড়তে যাওয়ার পর আর ফিরে না আসলে তার দাদি ফোনে কর্মস্থলে তাকা মাকে বিষয়টি জানায়। এরপর শিশুটির মা দ্রুত এসে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও তার মেয়েকে পাননি।
মেয়েকে কোথাও না পেয়ে শিশুটির মা আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখতে পান ঘটনার আগেরদিন ১২টা ৫০মিনিটের দিকে স্কুল বিরতির সময় রুবেল কৌশলে তার বাসায় নিয়ে যান। পরিবারের ধারণা বিড়াল ছানার নাম করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আর ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজে দেখতে পান বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে শিশুটি বোরকা পরে আরবি পড়তে যাচ্ছিল। এ সময় রুবেলের সঙ্গে সে কথা বলছিল। এক পর্যায়ে রুবেল বাজারের থলেভর্তি একটি বিড়ালছানা শিশুটির হাতে তুলে দেয়। এরপর আসামি ও শিশুটিকে আর দেখা যায়নি।
সিসি টিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে রুবেল অন্যদের সহযোগিতায় শিশুটিকে অপহরণ করেছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিশুটির মা।
কাঁদতে কাঁদতে শিশুটির মা বলেন ‘আমার মেয়েকে বিড়াল ছানার লোভ দেখিয়ে রুবেল ও তার সহযোগীরা অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছে অথবা অসৎ উদ্দেশে তাকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর করেছে। রুবেলেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকলে ঘটনার পরদিনই রুবেল বেশভূষা পরিবর্তন করতে দাঁড়ি কেটে ক্লিন শেভ করে নেয়। আমি মামলায় যেসব অভিযোগ তুলেছি তার সবকিছুর প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি আমার মেয়েকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চাই।’
এদিকে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। সংগঠনটি পরিবারটিকে আইনি সহায়তা দিচ্ছে।
সংগঠনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান বলেন, আদালত শুনানি শেষে পাহাড়তলী থানার ওসিকে সরাসরি এজহার নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। জামালখানের শিশু বর্ষা হত্যার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে।