আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁর সামনেই ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) আটক করেছিল র্যাব। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এনামুল হকসহ কয়েকজনের সামনেই জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেন। জেসমিনকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় এনামুলও উপস্থিত ছিলেন।
জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। এনামুল হকের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে।
র্যাব জানায়, এনামুল হক অভিযোগ করেন তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়েছে। এরপর তাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলে কিছু প্রতারক তাঁর নাম-পদবি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯ ও ২০ মার্চ এনামুল হকের নাম-পদবি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে তাঁর (এনামুল) কাছে তথ্য আসে। তিনি জানতে পারেন, এই প্রতারণার সঙ্গে আল আমিন নামের এক ব্যক্তি জড়িত। তাঁর সহযোগী হিসেবে জেসমিনের জড়িত থাকার তথ্য পান তিনি। ২২ মার্চ অফিসে যাওয়ার সময় তিনি র্যাবের টহল টিমের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর সামনে জেসমিনকে আটক করে র্যাব। আটকের সময় ঘটনাস্থলে অন্য লোকজনও ছিল। সবার সামনেই জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। র্যাবের দুজন নারী সদস্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তখন এনামুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, জেসমিনের মুঠোফোনে থাকা তথ্য কাছের কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে থানায় যাওয়ার সময় তিনি অসুস্থ বোধ করেন। এ সময় এনামুল হকও উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব। তখন তাঁর আত্মীয়স্বজন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে চিকিৎসক তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলেন। সেখানে সিটি স্ক্যানের পর চিকিৎসকেরা দেখতে পান, তিনি স্ট্রোক করেছেন।
যদিও স্বজনদের অভিযোগ, আটক হওয়ার আগে জেসমিন সুস্থ ছিলেন। র্যাবের হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে র্যাব। গতকাল সোমবার র্যাব সদর দপ্তর এই তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে র্যাবের কারও বিরুদ্ধে গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।