আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
বিড়ালের লোভ দেখিয়ে প্রথমে শিশু আবেদা সুলতানা আইনীনকে সবজিবিক্রেতা মো রুবেল নিয়ে যায় তার ফুফুর ভবনের চতুর্থ তলার খালি বাসায়। সেখানেই শিশুটিকে ধর্ষণ করে রুবেল। এ সময় শিশুটি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে গলা টিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর রাতেই বস্তায় ভরে তরকারির গাড়িতে ত্রিফল দিয়ে ঢেকে দিয়ে লাশটি দক্ষিণ কাট্টলীর মুরগী ফার্ম বাজার সংলগ্ন আলম তারা পুকুরের ডোবায় ফেলে আসে রুবেল। আর শিশুটির কাপড়, পায়জামা ও স্যান্ডেল কনকা সিএনজি স্টেশনের পাশের নালায় ফেলে দেয়। ঘটনাটি ২১ মার্চের। নিখোঁজের ৮দিনের মাথায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার ও ঘাতক রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর এই কথা জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার দুপুরে শিশুর মরদেহ উদ্ধার ও ধর্ষককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পিবিআইয়ের মেট্রো কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে বিফ্রিং করন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার (এসপি) নাঈমা সুলতানা।
নাঈমা সুলতানা বলেন, বাবার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় তিন মাস আগে আইনীনকে নিয়ে তার মা বিবি ফাতেমা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে আসেন। উঠেন মাবিবি খাদিজার বাসায় আসেন। এরপর বিবি ফাতেমা শিশুটিকে মায়ের কাছে রেখে স্থানীয় একটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তরকারি বিক্রয়ের সুবাদে বিবি খাদিজার সঙ্গে রুবেলের পূর্ব পরিচয় ছিল। ৩ মাস পূর্বে একটি বিড়ালছানা ধরতে গিয়ে শিশুটি রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খায়। তখন পাশেই তরকারি বিক্রি করছিল রুবেল। তখনই শিশুটির সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং জানতে পারেন সে বিবি খাদিজার নাতনি।শিশুটি তখন রুবেলের কাছে বিড়ালছানার আবদার করে। রুবেলও তার বোনের বাসা থেকে বিড়াল এনে দিবে বলে জানায়। এরপর বহুদিন শিশুটির সঙ্গে রুবেলের দেখা হয়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা আরও বলেন, গত ২০ মার্চ শিশুটি তার আরেক বান্ধবীকে নিয়ে রুবেলের বাসায় যায় বিড়ালছানার খোঁজে। অবশ্য তখন তারা রুবেলের দেখা পায় নাই। পরে বেলা ১১টার তরকারি বিক্রির সময় রুবেলের সঙ্গে তার দেখা হয়। রুবেল শিশুটিকে বিকেলে একটি নিদিষ্ট স্থানে বিড়ালছানা নিতে যেতে বলে। কিন্তু বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটি রুবেলের দেখা পায়নি। পরদিন সকালে শিশুটি রুবেলকে স্কুলের রাস্তার সামনে বিড়াল ছানার কথা জিজ্ঞেস করে। তখন রুবেল শিশুটিকে স্কুল শেষে ক্লাবের পাশে নিদিষ্ট স্থানে আসতে বলে। সে অনুযায়ী বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিশুটি স্কুল থেকে বাসায় ফিরে স্কুল ড্রেস বদল করে আসে। বোরখা ও হিজাব পরায় তখন রুবেল শিশুটিকে চিনতে পারেরনি। পরে শিশুটি ডাকলে রুবেল তাকে ফুফুর ভবনের চতুর্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে রুবেল। মূলত ধর্ষণ ধামাচাপা দিতেই রুবেল মেয়েটিকে হত্যা করে।
নাঈমা সুলতানা বলেন, শিশুটির পরিবার মেয়ের খোঁজে চারপাশে খোঁজা শুরু করলে রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের অবস্থা দেখত। এরপর খড় দিয়ে ঐ লাশ ভরে রাখা বস্তাটি লোকজনের দৃষ্টির আড়াল করতে ঢেকে দিত।
মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর সিসিটিভির ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে রুবেলই জড়িত সেটি নিশ্চিত হয়েছিলেন বাবা বিবি ফাতেমা। এরপর একাধিকবার পাহাড়তলী থানায় শরাণাপন্নও হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিম গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে শিশুটির পরিবার। এরপর পিবিআইয়ের কাছেও যান বিবি ফাতেমা। কিন্তু সাতদিনেও মেয়ের হদিস না পেয়ে এরপর নিরুপায় হয়ে শিশুটির পরিবার যায় আদালতে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে রুবেলকে আসামি করে মামলার আবেদন করেন মা। আদালত মামলার সরাসরি এজহার গ্রহণ করতে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের কপি থানায় পৌঁছার আগেই মেয়ের নিথর দেহ পেলেন মা বিবি ফাতেমা।
মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা বিবি ফাতেমা। মেয়ের লাশ যেখানে উদ্ধার হয়েছে সেখানে যান তিনিও। এ সময় সবার কাছে তিনি বারবার অনুরোধ করেন, আমার মেয়েটারে এক নজর দেখতে দিন।
এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিবি ফাতেমা বলেন, আমি পুলিশকে বলেছিলাম রুবেলই আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ এসে রুবেলকে একটু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। বলে রুবেল ভালো ছেলে। সে এ কাজ করতে পারে না। তোমার মেয়ে প্রেম করে কারও সঙ্গে চলে গেছে। ১০ বছরের একটা মেয়ে কীভাবে প্রেম করবে। এখন একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আমার বুকটা তো খালি হয়ে গেল। এখন আমাকে কে মা বলে ডাকবে?’
শিশুটির মায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।