সকাল ৮:৩৩, বুধবার, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাসমান দোকান থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

সড়কের দুপাশে কিছু ভাসমান দোকান ছিল একসময়। কালের বিবর্তনে সেই এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার। খাতুনগঞ্জের অদূরে পাইকারি কাপড়ের এই বাজার গড়ে উঠেছে প্রায় শত বছর আগে। যতদূর জানা যায় খাতুনগঞ্জের পার্শ্ববর্তী আমির মার্কেটে কিছু কাপড়ের দোকান ছিল শুরুতে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা ধীরে ধীরে নাজু মিয়ে লেন হয়ে টেরিবাজার রোডের দিকে এগুতে থাকেন। শুরুতে রাস্তার দুই পাশে বসে কিছু ভাসমান দোকান। সেখান থেকেই গড়ে উঠে আজকের টেরিবাজার। যেখানে প্রতিবছর বিক্রি ছড়িয়ে যায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

টেরিবাজারের নামকরণ নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন জানান, এক থেকে দেড়শ বছর আগে পাতিলের দোকান ছিল বর্তমান টেরিবাজারে। সেখানে কোমো একটা জায়গার নাম ছিল টেড়ি। সেই টেড়ি থেকেই হয়েছিল টেড়িবাজার। পরবর্তীতে তা মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে রুপ নেয় টেরিবাজারে।  নামকরণের বিষয়ে শুরুর দিকের ব্যবসায়ীরা নির্ভুল তথ্য দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।

তবে ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহসভাপতি ফরিদুল ইসলাম জানান ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘টেরিবাজার এসেছে মূলত তেওয়ারি নামের একজন ব্যক্তি থেকে। তিনি হয়তো এই এলাকায় কাপড় নিয়ে বসতেন, পরবর্তী তার নামানুসারে এখানে তেওয়ারি বাজার হয়েছিল। সেটা পরবর্তীতে মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে টেরিবাজার হয়।’

চট্টগ্রাম তো বটেই, আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার ইদ বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় এই টেরিবাজার থেকেই৷ কারণ প্রতিবছর এই বাজারের ব্যবসায়ী যা বেচাবিক্রি করেন, তার এক পঞ্চমাংশের বেশি বিক্রি হয় ঈদ উপলক্ষে। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার হওয়ায় এখান থেকেই আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঈদ উপলক্ষে এই বাজার থেকেই পাইকারী কাপড় নিয়ে যান।

একসময় দেশীয় তৈরি কাপড়ের বাইরে টেরিবাজারে কেবল কলকাতার কাপড়ের আধিক্য ছিল। তবে সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটেছে অবস্থার। এখন ভারতের গুজরাট, মুম্বাই, হরিয়ানাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পোষাক আমদানি করেন টেরিবাজারের ব্যবসায়ীরা। আমদানির পর বাজার থেকেই সরকারি খুচরা ও পাইকারি হিসেবে এসব পোশাক বিক্রি করেন তারা।  প্রতিবছর টেরিবাজারে ঈদের আমেজ আসে অন্তত তিন মাস আগে। তিন মাস আগেই শুরু হয় পাইকারীতে ঈদের পোষাক বেচাকেনা। খুচরা ঈদবাজারও শুরু হয় অন্তত দুমাস আগে। তবে রমজান শুরুর পর বাড়ে বেচাকেনা। ঈদ বাজার জমজমাট হয় রমজানের শেষ ১০ দিনে। 

শুরুতে রাস্তার দুপাশে হাতেগোনা কয়েকটি ভাসমান দোকান থাকলেও টেরিবাজারে এখন দোকানের সংখ্যা দুই হাজারের মত। বিভিন্ন ধরণের শপিং মল আছে একশ’র মত। ওয়ানস্টপ শপিং মল আড়াই ডজনের বেশি। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আছেন আড়াই হাজারের মত। এই বাজর থেকে থান কাপড় কিনে পোষাক সেলাই করা যায় বাজারের মধ্যেই। থান কাপড় দিয়ে পোষাক সেলাইকে কেন্দ্র করে টেরিবাজারে দর্জির দোকানও গড়ে উঠেছে শতাধিক।  সম্প্রতি (সোমবার) টেরিবাজার ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় কিছুটা ফাঁকা থাকলেও ইফতারে পর সন্ধ্যা গড়াতেই লোকারণ্য হয়ে উঠে পুরো এলাকা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দোকানে নানা সাজসজ্জার পাশাপাশি হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। কয়েক দশক আগেও টেরিবাজার ছিলো শাড়ি ও থান কাপড়ের পাইকারি বাজার। ২০০০ সালের পর পাইকারীর পাশাপাশি শুরু হয় খুচরা বিক্রি। সময়ে সাথে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে খুচরো ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে দেখে ব্যবসায়ীরা ব্যাপকহার ঝুঁকেন খুচরো বিক্রিতে। কেউ কেউ খুচরা ক্রেতাদের গুরুত্ব দিয়ে একই ছাদের নিছে সব ধরনের পোষাক নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এতে টেরিবাজারের ব্যবসায় যোগ হয় নতুন মাত্রা। যাত্রা করে ওয়ান স্টফ শপিং মল। এরপর ধীরে ধীরে ঈদের মৌসুমে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ টেরিবাজারে কেনাকাটা করতে শুরু করেন। এখন তো চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ঈদ বাজারে পরিণত হয়েছে এই বাজার।

বর্তমানে রাজবধূ, মাসুম ক্লথ স্টোর, বধুয়া শপিং, বৈঠক বাজার, ভাসাবি, মনে রেখো, শাহ আমানত, হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স, রাজস্থান, মল টুয়েন্টি ফোর, মোহাম্মদীয়া, হ্যালো ফ্যাশন, সানা ফ্যাশন, রাজপরী, জারা শপ, জাবেদ ক্লথ স্টোর, পরশমনি, শিরমনি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, আলিশা, এ্যাম্পোরিয়াম, নিউ আজমির, রোশন, খাজনা ইত্যাদি এসবের মত এরকম ওয়ান স্টফ শপিং মলের সংখ্যা ত্রিশ ছড়িয়েছে টেরিবাজারে।

এসব শপিং মলের অধিকাংশই আবার দুই থেকে তিন ধাপে সাজানো। প্রথম তলায় নারীদের পোষাক থাকলে দ্বিতীয় তলায় থাকছে শিশু ও পুরুষদের পোষাক। কোনো কোনো শপিং মলে মিলছে নারীদের নানা প্রসাধনী আর জুয়েলারীও।  শাড়ী ও থান কাপড়ের পাইকারি বাজার থেকে পাইকারীর পাশাপাশি পুরোদস্তুর খুচরা ঈদবাজারে পরিণত হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন বলেন, ‘১৯৮০ সালের দিকে টেরিবাজারের মূল সড়কে কিছু মার্কেট ছিল। ধীরে ধীরে এই এলাকায় আরো অনেক দোকান ও মার্কেট হয়েছে৷ টেরিবাজারের একটা ঐতিহ্য আছে, এখানে মূলত থান কাপড় ও শাড়ির পাইকারী বাজারের ব্যবসা ছিল।  গত ১৫ থেকে ২০ বছরে কিছু খুচরা দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে কিছু শোরুমও রয়েছে৷ এখানে ব্যবসায়ীরা মূলত পাইকারি ব্যবসা করেন, টেকনাফ থেকে কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রাম এসব জায়গায় এখান থেকে কাপড় সরবরাহ করা হয়। এখন খুচরো বিক্রির যে প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে, এগুলোর কারণে টেরিবাজারের সুনাম আরো বেড়েছে।’

যে মার্কেটগুলো আছে, ওনারা কেবল খুচরা বিক্রি করেননা, শোরুম থেকে পাইকারীতেও বিক্রি করেন। কারণ টেরিবাজারের ব্যবসায়ীদের মূলনীতি হলো, ‘ম্যাক্সিমাম সেল, মিনিমাম প্রফিট’। এর ভিত্তিতেই টেরিবাজারটা দাড়িয়ে আছে, আগামীতেও থাকবে। স্বল্প আয়ের দিনমজুর থেকে উচ্চ আয়ের বিত্তশালী, সবার জন্যই পোষাক পাওয়া যায় টেরিবাজারে। মূলত পাইকারী বাজার হওয়ায় লুঙ্গি থেকে শাড়ী-থ্রী পিস শার্ট সব ধরনের নানা মানের পোষাক পাওয়া যায় সেখানে। তাই নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত, কারোরই পছন্দের পোষাক কিনতে সমস্যা হয় না টেরিবাজারে।

সর্বশেষ সংবাদ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা

ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলেম-ওলামাদের ঢল