আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, চাল, ডাল, তেল এবং কৃষি ও শিক্ষা উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং সংসদ বিলুপ্ত করে নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শনিবার (১ এপ্রিল) সারাদেশে অনুষ্ঠিত বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশী হামলা, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং আওয়ামী লীগের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ক্রমশ বিপজ্জনক রূপ ধারণ করছে।’
রবিবার (২ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দেওয়ার পর দেশকে একদলীয় দুঃশাসনের চরম অন্ধকারে নিপতিত করতে বর্তমান গণবিচ্ছিন্ন ও ভোটারবিহীন সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর হামলা, গ্রেফতার ও ভাংচুর চালাতে লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার দুঃশাসন ক্রমশ বিপজ্জনক রূপ ধারণ করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকার আইনের সীমানার মধ্যে না থেকে চরমভাবে সীমালঙ্ঘন করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে পদদলিত করছে নিষ্ঠুর দমননীতি অবলম্বন করে। এই অগণতান্ত্রিক সরকার গণতন্ত্রের বিধি-বিধান ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না বলেই বিএনপিসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশসহ মত প্রকাশে নগ্নভাবে বাধা প্রদান করছে।’
নাটোরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্য দেওয়ার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, জেলা বিএনপি নেতা দেওয়ান শাহীন, শহর যুবদলের সভাপতি শামীম আহমেদ, কাঠুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি শরীফ, শহর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রনি বেপারী, ছাত্রনেতা শৈবালসহ ৭০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাসভবনস্থ দলীয় কার্যালয় ও অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাংচুর করা, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাঈদ চাঁদ, পবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোজাফফর হোসেন, চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্ণীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মৃধাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সাতজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং ব্যাপক লাঠিচার্জের মাধ্যমে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একইদিনে জামালপুরে ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা, খুলনা মহানগর বিএনপি আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ, বিএনপি নেতা ইবাদুল হক রুবায়েদ, হাসানুর রশীদ মিরাজ, ইশতিয়াক আহমেদ ইসতি, ইমতিয়াজ আলী সুজন ও ফিরোজ মাহমুদসহ ৪০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হওয়া, কিশোরগঞ্জে কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও কোনো কারণ ছাড়াই ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের চেষ্টা, পুটুয়াখালী জেলা বিএনপি কার্যালয় ভাংচুরসহ পিরোজপুর জেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা ও ভান্ডারিয়া বিএনপির আহবায়ক আলহাজ আহমেদ সোহেল মনজুর গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা আওয়ামী সরকারের চলমান নির্যাতন-নিপীড়নের ধারাবাহিক চিত্র।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র নিরুদ্দেশ বলেই দেশে মানবতা, সভ্যতার চিহ্নও ক্রমাগতভাবে মুছে যাচ্ছে। দেশে এখন চলছে আদিম অরণ্যের আইন। বিকৃত দুঃশাসনে জনজীবনে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজমান। দুঃশাসনের শৃঙ্খলভঙ্গের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ জনগণের ওপর সরকার পুলিশি শক্তিকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করছে। এই কারণেই রাষ্ট্র ও সমাজে বিরাজমান রয়েছে চরম অস্থিরতা ও নৈরাজ্যকর পরিবেশ। সরকারি মদদে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখন আইনানুযায়ী কাজ করতে পারছে না। মনে হয় তারা বিরোধীদল দমনে ফ্রি লাইসেন্স পেয়ে গেছে। দেশে ভীতি ও শঙ্কা বিদ্যমান রাখার একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো সরকারের অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী শাসন নিয়ে কেউ যেন মাথা উঁচু করে কথা বলতে সাহস না পায়।’
আজকের সারাদেশ/৩ এপ্রিল ২৩/জেএম