আজকের সারাদেশ ডেস্ক:
প্রচণ্ড রোদে ছুটছে রিকশা। হাতলে সাঁটানো অক্সিজেন সিলিন্ডার, চালকের আসনা বসা মাইনুরজ্জামানের নাকে লাগানো নল। ফুসফুসের সমস্যা জনিত কারণে নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই গত সাত বছর এভাবেই কেটেছে তার।
৫৫ বছর বয়সী মাইনুরজ্জামান সেন্টু স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রাজশাহী নগরীর কলাবাগান এলাকায়। তিন ছেলে মেয়ের সবাই বিবাহিত, সবারই আলাদা সংসার। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঠিক ছিল সব। নিজের নাস্তার দোকানের আয় দিয়ে ভালোই চলতো সংসার। কিন্তু ওই বছর নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় দোকান। এরমধ্যে যক্ষ্মা ধরা পড়ে মাইনুরজ্জামানের। চিকিৎসায় যক্ষ্মা তাকে ছেড়ে গেলেও ক্ষত করে যায় ফুসফুস। তাই ফুসফুসের সমস্যা জনিত কারণে শ্বাসকষ্ট হয় তার। শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতেই নাকে অক্সিজেনের নল নিয়ে ছুটেন মাইনুরজ্জামান।
এখন প্রতিদিন সাড়ে চারশ টাকার অক্সিজেন লাগে তার, ওষুধ খরচ ছয়শ। চালাতে হয় সংসারও। চিকিৎসা খরচ ও জীবিকার তাগিদে এমন অসুস্থতার মধ্যেও জীবন তার হাতে তুলে দিয়েছে রিকশার হাতল।
সম্প্রতি মাইনুরজ্জামানের সাথে কথা বলে নানা গণমাধ্যম। তিনি জানান, যতক্ষণ অক্সিজেন থাকে, ভালো থাকেন। নল খুললেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এমনকি কথাও বলতে পারেননা তখন।
আগে দুটা লাগলেও গত পাঁচ মাস থেকে প্রতিদিন তিনটা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হয় তার। অক্সিজেন যোগাতে হিমসিম খান প্রতিদিনই। এরমধ্যে গেলো দেড় মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তিনবার। এরপরও সব খরচ যোগাতে রিকশাই ভরসা৷
মাইনুরজ্জামান বলেন, ‘দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৬ সালের দিকে আশা নামের একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি (ঋণ) নিই। আরও কিছু ধারদেনা করে ৮০ হাজার টাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনি। তারপর থেকে রিকশা চালাই। আমাদের ঘর-বাড়ি নেই। তাই ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়। বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে মালিককে ২ হাজার করে টাকা দিতে হয়। রিক্সা চালিয়ে টাকা জোগাড় করে এগুলোর পেছনে খরচ করি। অসুস্থ মানুষ আমি তাই অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। তাছাড়া অন্য কাজও শিখিনি, যে করে খাব। আমার যক্ষ্মা হয়েছিল। তারপরে ফুসফুসে সমস্যা হয়। যক্ষ্মা ভালো হয়েছে। কিন্তু ফুসফুসের সমস্যা আর ভালো হয়নি। ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্ট রোগ হয়েছে।’
মাইনুরজ্জামান সেন্টুর স্ত্রী চাম্পা বেগম বলেন, ‘অক্সিজেন ছাড়া সে চলতে পারে না। প্রতিদিনের অক্সিজেন কিনতে খুব কষ্ট হয়। সরকার থেকে অনেকগুলো অক্সিজেন দিয়েছিল। সরকার আর কত দেবে। বর্তমানে আমাদের দুইটা অক্সিজেনের সিলিন্ডার আছে। একটা মামা শ্বশুর দিয়েছে। আরেকটা এলাকার একটা মানুষ দিয়েছে। অক্সিজেনের সিলেন্ডার কিনতে হয় না। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের অক্সিজেন কিনতে হয়। আগে প্রতি সিলিন্ডার অক্সিজেনের জন্য ২০০ টাকা করে দিতে হতো। পরে অক্সিজেনের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে ১৫০ টাকা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, তার অসুখ সাত বছরের বেশি সময় থেকে। গেল তিন বছর থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন তিনটা করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার লাগে। সেই টাকাও সে নিজেই কাজ করে জোগাড় করে। রিকশা চালিয়ে আমাদের দুই মানুষের সংসার চালায়।’
আজকের সারাদেশ/১৬ মে/এএইচ