আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। বুধবার (১৭ মে) দিবাগত রাতে হালদা নদীর কয়েকটি স্পটে নমুনা ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মা মাছ।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জো’র মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় ডিম ছাড়ার কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম চলছে এখন। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রজনন মৌসুমের তিনটি জোঁ অতিক্রম হলেও হালদায় কার্পজাতীয় মাছের কাঙ্ক্ষিত ডিমের দেখা মেলেনি। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ জোঁ’র মধ্যে গতকাল রাতে হালদার কিছু কিছু স্পনিং গ্রাউন্ডে খুবই সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিমের উপস্থিতি দেখা গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ পাহাড়ি ঢল নামলে আজ কালকের মধ্যে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।’
হালদা ডিম সংগ্রহকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম বলেন, ‘গতকাল রাতে কিছু নমুনা ডিম দেখেছিলাম। আমদের ধারণা ছিল আজ দুপুরে জোয়ারের সময় ডিম ছাড়বে মাছ। কিন্তু এখন দেখি পানি বেড়ে গেছে, লবণ ওানি ঢুকেছে। লবণ পানিতে ডিম ছাড়ে না। তবে শুনেছি দিঘিনালার (খাগড়াছড়ি) দিকে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে, পাহাড়ি ঘোলাপানি নদীতে নামলে তখন ডিম ছাড়বে। আমরা প্রতি জোয়ারে চেক করি, এভাবে আগামী সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, সাধারণত হালদায় এই সময়টাতে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার মধ্যে মা মাছ নিষিক্ত ডিম ছাড়ে। এই সময় বলতে এটা এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে একদম মে মাসের শেষ পর্যন্ত। আর এই ডিম ছাড়া পানির কোয়ালিটি, পাহাড়ি ঢল, বজ্রসহ বৃষ্টি এসবের উপর নির্ভর করে।
এদিকে জালুবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেওয়া কমেছে হালদায়। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি, গেলো বছরে তা কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি৷
ধীরে ধীরে হালদায় ডিম কমার বিষয়ে মো. শফিউল আলম বলেন, ‘আমার দাদা এখান থেকে ডিম সংগ্রহ করতেন, এরপর আমার বাবা। গত ১৬ বছর ধরে আমিও ডিম সংগ্রহ করি। কিন্তু এখন ডিম আগের মত হয় না, গত বছর আমরা দুজন মিলে ৬ টা জাল পেতেছিলাম, ৬ জাল মিলেয়ে মাত্র ২ কেজি ডিম পেয়েছি।’
আজকের সারাদেশ/১৮ মে/এএইচ