আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামে এক ভাসমান ব্যবসায়ীকে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে৷ মারধরের দুইদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে ভোক্তভুগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন।
মামলায় কাউন্সিলর ছাড়াও অজ্ঞাত ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর।
ভোক্তভুগী ব্যবসায়ীর নাম অপু প্রধান (৩১)। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানার হাকিমপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি।
অপু প্রধানের দাবি, তিনি একজন হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ক্রোকারিজ, সিরামিকস ও মুদি মালামাল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গেলো ১৭ মে বিকেল চারটা থেকে পূর্ব ফিরোজশাহ এলাকার এইচ ব্লক মোড়ে বসে বেচাবিক্রি শুরু করেন। এর ঘন্টা খানেক পর কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা এসে তাকে মারধর করেন।
তিনি বলেন, “কাউন্সিলর এসে বলেন, ‘তুই নাকি লটারি দিয়েছিস’ এই কথা বলে আমাকে কোন উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড়, লাথি ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। চিৎকার করে গালিগালাজ করে বলতে থাকে কার পারমিশন নিয়ে আমার এলাকায় ব্যবসা করতেছিস। আমার এলাকায় ব্যবসা করতে হলে আমার অনুমতি লাগবে। হাদিয়া (চাঁদা) ব্যতীত কোন ব্যবসা করা যাবে না। এলাকার সকল ব্যবসায়ী আমাকে মাসোহারা (চাঁদা) দিয়ে ব্যবসা করে, তুইও দিবি। এই সময় উল্লেখিত আসামীরা আমার গায়ে থাকা টি শার্ট এর কলার চেপে ধরে টেনে হিছড়ে লাথি, কিল, ঘুষি ও চড় থাপ্পড় দিতে থাকে। এ সময় তারা আমার ক্যাশে থাকা নগদ টাকা পয়সা নিয়ে নেয় এবং আমার বেশ কিছু মালামাল লুটপাট ও ভাংচুর করে।”
এর আগে বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ওই ব্যবসায়ীর টিশার্টের কলার ধরে প্রকাশ্যে মারধর করছেন। ওই রাস্তা দিয়ে পুলিশের একটি টহল গাড়ি যাওয়ার সময় তাদের ডেকে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। পুলিশের সামনেও ব্যবসায়ীকে লাথি মারতে দেখা যায় কাউন্সিলর জসিমকে।
পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সময় জসিম ওই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেন- ‘তোর বাড়ি কোথায়? তোকে জুয়া বসানোর কে পারমিশন দিছে?’ এসময় ব্যবসায়ীকে পুলিশে তুলে দেয়ার সময় নিজে বাদী হয়ে মামলা করবেন বলতেও শোনা যায়।
ব্যবসায়ীকে মারধর ও কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ভোক্তভুগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। চাঁদাবাজি ও তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। আমরা ঘটনাটা তদন্ত করছি, তদন্তের পর জানা যাবে বিস্তারিত।’
কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় দখল ও পাহাড় কাটার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় ধসে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। এর আগে ২০২২ সালেও পাহাড় কাটার অভিযোগে জসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।
আজকের সারাদেশ/১৯মে/এএইচ