আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নিবে না। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’
শনিবার (২০ মে) বিকেলে নগরের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আরিফুল হক চৌধুরী।
জনসভায় বক্তব্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিএনপির রাজনীতি শুরু করি। আমার জীবন থাকতে এই দলের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।’
তাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে মেয়র আরিফ বলেন, ‘অনেকেই আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার বানানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্ত আমি সেই সুযোগ কাউকে দিতে চাই না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। বিশেষ করে ইভিএম নিয়ে নগরের মানুষজন জানে না। এটা ভোট কারচুপির মহা আয়োজন। অতীতে আপনারা আমার পাশে ছিলেন। আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় আপনারা আমর পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি সেই সব কথা ভুলতে পারি না।’
মেয়র আরিফ আরও বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমার দল বিএনপি অংশ নিবে না। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। আমি আপনাদের সন্তান, আমি আপনাদের ভাই। আমি মেয়র না থাকলেও আপনাদের পাশে সব সময় থাকব। আমাকে আপনারা ক্ষমা করুন।’ এ সময় আরিফ নগরবাসীকে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানান।
এর আগে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসা কুমারপাড়া থেকে হেঁটে হজরত শাহজালাল (র.) মাজারের উদ্দেশ্যে পৌঁছান মেয়র আরিফ। পরে মাজার জেয়ারত শেষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় রেজিস্ট্রারি মাঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়। সমাবেশ উপলক্ষে রেজিস্ট্রারি মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ হয় নেতা-কর্মীদের পদচারণায়।
প্রসঙ্গত, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও গত এক মাস ধরে আরিফ তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখেন। ফলে সিটি নির্বাচন ঘিরে তাঁকে নিয়ে যে জল্পনা-কল্পনার অবসান তিনি নিজেই করলেন।
গত কয়েক দিন ধরে মেয়র আরিফ প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন ও দলের সিদ্ধান্তের কথা ভেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন। যদিও গতকাল ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপুর জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশে তাঁর দেওয়া বক্তব্যে নতুন করে জল্পনা উসকে দিয়েছেন। আরিফ বলেছেন, ‘আমি সব সময় সিলেটের জনগণের পাশে ছিলাম এবং আছি। যে অবস্থানেই থাকি না কেন, প্রিয় সিলেটের জনগণের পাশেই থাকব।’
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিষয়ে সংকেত রয়েছে এবং তা দু-চার দিনের মধ্যে জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন আরিফুল হক। যুক্তরাজ্যে সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে ওই সংকেত পান। সংকেতটি লাল, না সবুজ; অর্থাৎ নির্বাচন করবেন কি না, তার ব্যাখ্যা দিতে এক মাস সময় চেয়ে নেন। ফলে আজ দুপুরে রেজিস্ট্রারি মাঠের নাগরিক সমাবেশে আরিফুল কী ঘোষণা দেন। তারই প্রতীক্ষা করছেন প্রার্থী, ভোটার ও সাধারণ মানুষ।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে বিএনপি নেতা আরিফুল হক নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন ছিল। বিভিন্ন সময়ে আরিফুল হকের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে এই গুঞ্জন ও নগরবাসীর কৌতূহল আরও বাড়িয়েছিল।
আজকের সারাদেশ /২০ মে /এসএম