হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেডে আকমল আলী সড়ক এলাকার একাংশে চারদিন ধরে বিদ্যুতহীন রয়েছে দুই সহস্রাধিক বাসিন্দা। এসব বাসিন্দাদের অধিকাংশই ইপিজেডে তৈরি পোষাক কারখানায় কাজ করেন। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে বাসায় ফিরে অন্ধকারেই সময় কাটছে তাদের। বিদ্যুত না থাকায় পাওয়া যাচ্ছেনা পানিও। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।
বিদ্যুতহীন ওই এলাকায় অবস্থিত ইসমাইল সুকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের পাকা ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে হলে পাশে টিনের তৈরি কাঁচা ঘরে চলছে পাঠদান। বিদ্যুত না থাকায় তীব্র গরমে চরম ভোগান্তির শিকার কোমলমতি শিশুরাও।
ওই এলাকার মো. ইমন নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সোমবার আমার পরীক্ষা ছিল, কয়েকদিন বিদ্যুত না থাকায় আমি পড়তে পারিনি। তাই পরীক্ষাও খুব একটা ভালো হয়নি। সামনে আবার ২৭ তারিখ পরীক্ষা আছে, তাই এখন মোমবাতি জ্বালিয়ে পড়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু গরমে বাসায় থাকা যাচ্ছে না।’
![](https://ajkersaradesh24.com/wp-content/uploads/2023/05/629f5656-b8c5-4c70-b21f-795966d91b52.jpg)
ভোক্তভুগীদের অভিযোগ, চারদিন আগে ওই এলাকার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়ে বিকল হয়ে যায়। একদিন পর পাশ্ববর্তী আরেকটি ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার চেষ্টা করে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। একই সাথে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের চাপ কমাতে পুরাতন ট্রান্সফর্মারটিও সংস্কারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেলিম রেজা নামের স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বাঁধা দেয়। সেলিম রেজাকে এই কাজে সহযোগীতা করেন তার তিন ভাই আকতার, বেলাল ও রফিক।
গেল মঙ্গলবার সেলিম রেজা ও তার ভাইদের বাঁধার মুখেও তীব্র ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে পিডিবির লোকজনকে নিয়ে ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে যান স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসীম। এসময় জসিমকে মারধর ও পিডিবির লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন সেলিম রেজার ছোটো তিন ভাই। এছাড়াও ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বিদ্যুত না থাকায় ভোগান্তির কথা প্রকাশ্যে বলায় তাকেও মারধর করেন সেলিম রেজা।
মারধরের শিকার মো. জসিম জানান, ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে সড়কের পাশে। এই সড়ক দিয়েই এলাকায় যেতে হয়। সেখানে ইপিজেড কাছে হওয়ায় ঘনবসতির কারণে অন্তত আড়াই হাজার পরিবার বাস করে। তবে সড়কের জমির মালিকানা সেলিম রেজার পরিবারের। কিন্তু সড়ক ব্যবহার, বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির সংযোগের জন্য ২০১০ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সেলিম রেজার বাবার সাথে তাদের একটি চুক্তি হয়। কিন্তু তারা এখন চুক্তিটি মানতে চান না। ট্রান্সফর্মারে নতুন করে বিদ্যুত সংযোগে বাঁধা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘৩ দিন ধরে বিদ্যুত না থাকায় মঙ্গলবার বিকেলে আমি ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুত সংযোগ দিতে গেলে সেলিম রেজার তিন ভাই আমাকে মারধর করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিস হওয়ার কথা রয়েছে, তাই আমি এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করিনি।’
২০১০ সালে সাক্ষরিত ওই চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন তৎক্ষালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আসলাম। তবে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
![](https://ajkersaradesh24.com/wp-content/uploads/2023/05/d6adcf3f-58b5-4b1e-bce6-11e2d0d859f2.jpg)
ট্রান্সফর্মারে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়ার সময় বাঁধার বিষয়ে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, হালিশহর) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা মূলত স্থানীয় দুই পক্ষের বিরোধ। সেখানে আগে দুটো ট্রান্সফর্মার বসানো ছিল। একটাতে সংযোগ ছিল, অন্যটাতে তাদের বিরোধের কারণে সংযোগ দেয়া যায়নি। তবে যেটাতে সংযোগ ছিল সেটা কয়েকদিন আগে বিকল হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন চাপ কমাতে স্থানীয়রা দুটা ট্রান্সফর্মারেই সংযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী আমরা সংযোগ দিতে গেলে একটা পক্ষ আমাদের বাঁধা দেয়। ইমেনকি যেটা বিকল হয়ে গেছে সেটা সংস্কার করতেও বাঁধা দেয়। এই বিষয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা স্থানীয় থানাকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে সেলিম রেজার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যার জায়গা তার কাছে এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি বাঁধা দিইনি। আমি কিছু জানিনা।’
আজকের সারাদেশ/২৪ মে/এএইচ