আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
ছুরিকাঘাতের কারণে তলপেট দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। কথা বলার শক্তিও ধীরে ধীরে কমে আসছিল। এর মধ্যেই কাঁপা কাঁপা স্বরে আজাদুর রহমান বলে উঠেন, ‘রাজু এবং ওসমানসহ আরও দুজন আমাকে ছুরিকাঘাত করেছে।’ নাম বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই তরুণ।
আজাদের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় তাঁর নাম বলে যাওয়া সেই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগ।
খুলনার পাইকগাছা থেকে রোববার তাদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, এই দুজন ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রেপ্তার দুজনের পুরো নাম হলো- আবুল হাসনাত রাজু (৩৪) ও মো. ওসমান (৩৫)।
সোমবার নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (ডিবি- পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, হামলার পর রাজু ও ওসমানকে তার ওপর হামলার জন্য দায়ী করেছিলেন আজাদুর রহমান, যার ভিডিও তার এক পরিচিতজন মোবাইল ফোনে ধারণ করেছিলেন।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওসমান ও রাজু হত্যাকাণ্ডের পর খুলনা পালিয়ে যান। সেখান থেকে সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। তার আগেই রোববার তাদের খুলনার পাইকগাছা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
প্রস্রাব করা নিয়ে আজাদের এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় আসামিদের। সেখানে যোগ দেন আজাদও। এর রেশ ধরে গত ২৮ মে পাহাড়তলী এলাকায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় আজাদকে। আজাদ খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী নাজমা আক্তার বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন। মামলায় ওসমান, রাজু, ফয়সাল ও রাজুর ছোট ভাই আবু তাহের মোহাম্মদ রাজীবকে আসামি করা হয়। পরদিন রাঙামাটি থেকে রাজুর ছোট ভাই আবু তাহের রাজীবসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তার দুই আসামির কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কি তথ্য পাওয়া গেছে তাও তুলে ধরেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আলী হোসেন। তিনি বলেন, প্রস্রাব করা নিয়ে আজাদের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে যে যুবকের কথাকাটাকাটি হয় তার নাম টমি। ভোররাতে টমি, ফাহিম, ওসমান ও রাজু মোটর সাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আজাদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান।
এরপর মোটরসাইকেল থেকে নেমে টমি প্রথম ছুরিকাঘাত করে আজাদকে, পরে ফাহিমসহ অন্যরা তাকে আঘাত করে। তবে মামলায় টমি ও ফাহিমের নাম নেই।’
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর আসামিনা টমির বাসায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি দুটি রেখে আসেন এবং পরনের কাপড় পাল্টে সেগুলো ভিজিয়ে রাখেন।
রাজু ও ওসমানকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করে আনার পর তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী টমির বাসা থেকে ছুরি দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খোকন নামের এক ব্যক্তির নামও বেরিয়ে আসে। খোকন স্থানীয় এক কাউন্সিলরের ছোট ভাই। অভিযুক্ত রাজু ও ওসমান এলাকায় খোকনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আজাদ ও তার ভাইয়ের সঙ্গে বিতণ্ডার পর টমি ও অন্যরা খোকনের বাসায় যান। সেখানে বসে সিদ্ধান্ত হয় ভোরেই আজাদের ওপর হামলা চালানো হবে। সেই অনুযায়ী ভোরে একা পেয়ে আজাদকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। আজাদকে খুন করার পর হামলাকারীরা পুনরায় খোকনের বাসায় যান বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, ‘খোকনের খোঁজে ইতোমধ্যে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি।’
আজকের সারাদেশ /০৫ জুন/টিএইচ/এসএম