কক্সবাজার প্রতিনিধি:
বেলা ১ টা রোহিঙ্গা মাওলানা আব্দুর রহিম গো হোম ক্যাম্পেইনের সমাপনী সমাবেশের মোনাজাতে হাত তুলেছেন। অঝর নয়নে কাঁদছেন তিনি। মায়ানমারের জান্তা সরকারের নির্মম অত্যাচারের কথা বলছেন আর ফরিয়াদ করছেন নিজ দেশে ফেরার। তার সাথে সাথে হাজারো রোহিঙ্গা হাত তোলে কান্নায় চোখ ভেজাচ্ছেন দেশে ফেরার আকুলতা নিয়ে। মোনাজাতে বলছেন,দেশে ফেরার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে আছেন। কোন শর্ত ছাড়াই যেন মায়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয়।
মায়ানমার সরকারের শর্ত জুড়ে দেয়া এবং প্রত্যাবাসন কার্যক্রম আলোর মুখ দেখার মুখেই ৫জুন প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া ৪ পরিবারের ২৩ সদস্যের একটি দলের ইউএনএইচসিআরের খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার পরপরই রোহিঙ্গারা ‘প্রত্যাবাসন বন্ধ করবেন না আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চায়।জাতিসংঘ আমাদের রেশন কাটছে আমরা আর শরণার্থী থাকতে চাই না আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সাহায্য করুন’- এমন আকুতি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া চৌরাস্তার মাথা, সাত রাস্তার মাথা ও পোড়া বাজারের মাঠের সমাবেশে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার অন্তত ১৩ টি শারণার্থী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা এ সমাবেশে অংশ নেয়।
ইউএনএইচসিআর কর্তৃক প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া ৪টি পরিবারের ২৩ সদস্যের খাদ্য সহায়তা বন্ধ করার পর ৮জুন প্রত্যাবাসন বন্ধ না করে ঘরে ফেরার সমাবেশ করেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ২০১৭ সালে মায়ানমারের সরকারের গণহত্যার শিকার হয়ে তারা পালিয়ে পাড়ি জমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় প্রদান করে ৬টি বছর থাকার সুযোগ দিয়েছে। তবে জীবনের সেই ৬টি বছরকে গোলামী জীবনযাপন বলে উল্লেখ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন,যতই স্কুল,মাদ্রাসায় পড়ি না কেন নিজ দেশ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই আমাদের উচিত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মায়ানমারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার কামাল বলেন, বাংলাদেশে থেকে আমরা কোন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ভবিষ্যতে বড় কিছু হতে পারব না। সেজন্য আমাদের দেশে ফিরতে হবে। আমাদের জাতির ভবিষ্যতের জন্য দেশে ফিরতে হবে।
রোহিঙ্গা নেতা ছৈয়দুল আমিন বলেন, সবই ঠিকঠাক চলছে তাই আমরা এখনো কেমন দুঃখে আছি বুঝতে পারছি না। আমরা যে গোলামী জীবন যাপনে আছি সেটা আমাদের বোঝতে হবে। প্রতিটি মাদ্রাসা, স্কুল,দোকান,বাজারে সবখানে আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া দরকার এটা আমাদের দেশ নয়। আমাদেরকে আরাকানে যেতে হবে। সেটিই আমাদের দেশ।
মর্যাদা নিশ্চিত করে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রত্যাশা করেন রোহিঙ্গা নেতারা। মায়ানমারের অন্যান্য ৮জনগোষ্ঠীর মতো রোহিঙ্গাদেরও যেন সেসব সুবিধা দিয়ে মায়ানমার সরকার তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে নেন সেটি দাবি করেন তারা
আজকের সারাদেশ/০৯জুন/এএইচ