আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
এ এক অন্যরকম নারী! প্রথম স্বামীর সংসারে জন্ম নেয়া দুই সন্তানকে বিক্রি করে দেন দ্বিতীয় স্বামীর সহযোগিতায়। এ ঘটনায় ওই নারীর সঙ্গে প্রথম স্বামীর বিচ্ছেদও হয়ে যায়। পরে দ্বিতীয় বিয়ের কথা গোপন রেখে শুরু করেন তৃতীয় স্বামীর সংসার। কিছুদিন পর সেই ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। এবারও দ্বিতীয় স্বামীর সহয়োগিতায় একমাস বয়সী সেই সন্তানকে ডাক্তারের বাহানা দিয়ে বিক্রি করতে নেন ওই নারী। আর সেটি করতে গিয়েই পড়লেন ধরা, ফাঁস হলো গোমরও।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় তৃতীয় স্বামীর সংসারে জন্ম নেয়া এক মাস বয়সী সন্তানকে বিক্রি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েন ওই পাষণ্ড নারী। এর পর বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। আটক ওই নারীর নাম সাবিহা।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাবিহা পরপর তিনটি বিয়ে করেছেন। তৃতীয় স্বামীর ঘরে জন্ম নেওয়া এক মাস বয়সী সন্তানকে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। এক কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন দ্বিতীয় স্বামী মনা। তৃতীয় স্বামী নাম সিরাজ।
গত শনিবার (৩ জুন) পল্লবীর ১২ নম্বর পূর্ব কুর্মিটোলা ক্যাম্পে ঘটনাটি ঘটে। আগের দুই শিশু এবং সর্বশেষ এক মাস বয়সী শিশু বিক্রির ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর বিভাগের পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া।
সাবিহার তৃতীয় স্বামী সিরাজের মা পারভীন বলেন, ‘ওই দিন (গত শনিবার) সকালে আমার ছেলের বউ এসে বলে আমার নাতিকে নাকি ইঁদুরে কামড় দিয়েছে। তাই ডাক্তার দেখাইতে যাবে। আমি রাজেরে দেখতে গিয়া ওর মুখে খামচির দাগ দেখছি। পরে সাবিহা আমাকে কিছু না বলে ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যায়। পরে শুনি তার আগের স্বামীর কাছে গেছে বাচ্চা বিক্রি করার জন্য। বাউনিয়া বাঁধ গিয়ে বাচ্চা বিক্রির সময়ে লোকজন তাঁদের হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’
পারভীন আরও বলেন, ‘সাবিহার প্রথম স্বামীর নাম হাবিব। ওই ঘরের দুই সন্তানকে সাবিহা দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। এ ঘটনার পর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। পরে মনাকে বিয়ে করে সাবিহা। তাদেরও ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।’
পুলিশ জানায়, স্থানীয়রা তাঁদের ধরে ফেলার পর মনা সব স্বীকার করেছেন। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন, সাবিহা টাকার লোভে আগের দুই সন্তানকে বিক্রি করেছেন। টাকা দিয়ে তিনি গয়না, টিভি, ফ্রিজ ও একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছেন। রাজকেও ৮০ হাজার টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ আসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সাবিহা তাঁর দ্বিতীয় স্বামী মনার সঙ্গে চলে যান।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান মিয়া বলেন, ‘পল্লবী থানার কুর্মিটোলা ক্যাম্পে এ ঘটনার পর শিশু রাজকে তার দাদির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সাবিহা তাঁর সন্তানকে নিতে রাজি হননি। তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্বামী মনার ঘরে ফিরে গেছেন। এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।’
আজকের সারাদেশ/০৯জুন/এসএম