হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম
আবহাওয়ার পরিবর্তনে লোডশেডিং পরিস্থিতি থেকে কিছুটা মুক্তি মেললেও চট্টগ্রামে চলছে আইপিএসের ব্যাটারি সংকট। লোডশেডিংয়ে পণ্যটির চাহিদা হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র রিচার্জেবল ফ্যান ও সৌর প্যানেলের দোকানেও।
জ্বালানি সংকটে দেশে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে বিদ্যুৎকেন্দ্র। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এরমধ্যে চলে তীব্র দাবদাহ। এতে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে তীব্র গরম থেকে বাঁচতে রিচার্জেবল ফ্যান, আইপিএস ও সৌর বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকে পড়ে সাধারণ মানুষ। এই সুযোগ অবৈধভাবে ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে দেয় এসব পণ্যের। তৈরি হয় কৃত্রিম সংকট। কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললেও তা নিতান্তই লোকদেখানো বলে দাবি সাধারণ ক্রেতাদের।
আইপিএস, সৌর প্যানেল ও রিচার্জেবল ফ্যানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট করতে দেখা গেছে ব্যবহারকারীদের। লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি কমাতে আইপিএস ও সৌরবিদ্যুতের মধ্যে কোনটা ব্যবহার সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক তা জানতে চেয়েছেন অনেকে।
নিহান আহমেদ নামের একজন লেখেন, ‘বর্তমান সময়ে আইপিএস ভালো হবে নাকি সোলার প্যানেল? আর কোন ব্রান্ডের হলে ভালো হয়? খরচ কেমন পরবে?’
নুসরাত খান নামের একজন লিখেন, ‘৩টা ফ্যান, ২টা লাইটের জন্য কোন আইপিএসটা ভালো হবে? কত ওয়ার্ডের আর ব্যাটারী কত অ্যাম্পিয়ার নিতে হবে?’
তৌহিদুল ইসলাম নামের আরেকজন জানতে চান আইপিএসের মূল্যের বিষয়ে। তিনি লিখেন, ‘৩টা ফ্যান ১২ঘন্টা চলার মতো আইপিএস নিতে কত টাকা খরচ হতে পারে?’
রিজভি আনাম নামের একজন জানতে চান রিচার্জেবল ফ্যানের বিষয়ে তিনি লিখেন, ‘লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। ২টা রিচার্জেবল ফ্যান নিতে চাইছি, যা মিনিমাম ২ ঘন্টা করে ব্যাক আপ দিবে। ৪ হাজার টাজা বাজেটের মধ্যে কোনটা নেয়া যায়?’
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের এসব পোস্টে অবশ্য পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই আইপিএস, রিচার্জেবল ফ্যান কিংবা সোলার প্যানেল সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতাও জানাচ্ছেন মন্তব্যের ঘরে।
শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আইপিএস ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে বাজারে আইপিএসের ঘাটতি না থাকলেও চলছে ব্যাটারি সংকট। তাই সরবারহকারীরা বাড়তি দাম নেওয়ায় খুচরা বিক্রিতে বাড়তি দাম নিতে হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। নগরীর মুরাদপুর এলাকার হালদা এন্টারপ্রাইজের মালিক আজিজুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত আমার দোকানে অন্তত পাঁচটা কোম্পানির আইপিএস পাওয়া যায়। কিন্তু এখন রহিম আফরোজ ও লিডগার্ড আছে, আমরা সেগুলো বিক্রি করতেছি। চাইলে বেশি দামে বাহির থেকে অন্য কোম্পানির মালামাল আনা যাবে। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে মূল্য বেশি হওয়ায় আপাতত আনছি না আমরা। স্বাভাবিকের মধ্যে যা আছে, তাই বিক্রি করতেছি।’
বহদ্দারহাট এলাকার জে.বি. এন্টারপ্রাইজের মালিক জয়নাল ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন সরাবারহ কম থাকায় আইপিএসের দাম একটু বাড়তি। এখন আইপিএস নিয়ে সমস্যা নেই, সমস্যা হলো মূলত ব্যাটারি নিয়ে৷ ব্যাটারির সংকট। এখন যেগুলো আছে, তার দাম ৪৫ হাজার থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে। আপনার কত ওয়াটের দরকার, তার ভিত্তিতে মূল্যের তারতম্য হয়। ব্যাবহারের উপর ভিত্তি করে চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা নিতে পারবেন।’
চাহিদা বৃদ্ধির কারণে রিচার্জেবল ফ্যান ও সৌর প্যানেলেরও সরবরাহ কম বলে জানিয়েছেন নগরীর অক্সিজেন মোড় এলাকার খলীল ট্রেডার্সের মালি মো. ইব্রাহিম খলীল। তিনি বলেন, ‘আগের মালামাল যা ছিল তা লোডশেডিংয়ের শুরুতেই বিক্রি হয়ে গেছে৷ তখন আমরা বাড়তি দাম নিইনি৷ কিন্তু নতুন মালামাল আনার সময় দেখি দাম বেশি, কারণ চাহিদা বাড়ছে। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে৷’
দেশে নানা সংকটে ব্যবসায়ীরা এগিয়ে না এসে ক্রেতাদের পকেট কাটে বলে দাবি অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষের পকেট কাটেন। সিলেটে সম্প্রতি এমটা দেখা গেছে। এখন লোডশেডিংয়ে আইপিএস, ফ্যান ও সৌলার প্যানেলের বেলায়ও এটা দেখা যাচ্ছে।’
এদিকে শিগগিরই লোডশেডিং সমস্যা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলতে পারে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (চট্টগ্রা প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘এতদিন যে দাবদাহ ছিল, সেটা কমেছে, এখন তো বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। এতদিন আমাদের চাহিদার অর্ধেকের বেশি লোডশেডিং ছিল। এখন সেটা কমে এসেছে৷ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
আজকের সারাদেশ/১০জুন/এএইচ