রাত ১১:০৫, শুক্রবার, ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-১০ আসনেও কি চমক?

হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম

রাষ্ট্রপতি থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন-চমকের পর চমক দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের ত্যাগী আর কম আলোচিত নিষ্কুলষ নেতাদের এসব জায়গায় মনোনয়ন দিয়ে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক চলমান সেই ধারা কি দেখা যাবে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনেও?

গত ৬ ফেব্রুয়ারী দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে রাজধানরীর একটি হাসাপাতালে মারা যান  চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তার মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়। মনোনয়ন দৌড়ে সামনের সারিতে থাকা বেশ কয়েকজনকে নিয়ে চলে জোর আলোচানা। তবে শেষ পর্যন্ত যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন তার কথা কেউ ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি। সকল হিসেব নিকেশ বদলে দিয়ে ওই আসানে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান তুলনামূলক কম আলোচিত ও নিষ্কুলষ নোমান আল মাহমুদ।

আওয়ামীলীগ পরের চমকটি দেখায় রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে। সব জল্পনা কল্পনা মিথ্যা প্রমাণ করে রাষ্ট্রপতি পদে দলের মনোনয়ন পান আলোচনার বাইরে থাকা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের মৃত্যুর পর আসনটি খালি হলে উপনির্বাচনে ফের মনোনয় নিয়ে শুরু হয় নানা হিসেব নিকেশ। তবে শেষ পর্যন্ত সেই হিসেব নিকেশ কতটা মিলে, নাকি এবারও চমক দেখতে যাচ্ছে চট্টলাবাসী সেটারই অপেক্ষা এখন।

 তবে এখন পর্যন্ত আলোচনায় আছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দিন,  সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সাবেক মেয়র মনজুর আলম, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু,  যুগ্ন আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, প্রয়াত আফছারুল আমীনের ভাই এরশাদুল আমিন, ছেলে ফয়সাল আমিন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম।

তবে আলোচনায় থাকলেও খুব একটা দৌড়ঝাপ দেখা যাচ্ছেনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম. নাছির উদ্দিনের। সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম-৮ আসন শূন্য হলে ওই আসনেও মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি তিনি। আলোচনায় থাকলেও এবারও তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন না বলে ধারণা নগর আওয়ামীলীগের একাংশের। এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মূলত নির্বাচন ও মনোনয়ন সংগ্রহের প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম  সুজনও আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম-০৮ আসনে তৃতীয় দফায় উপনির্বাচনের আগে। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি। এদিকে সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে তাকে চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বয়ক করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ১৪ দলের সমাবেশের আয়োজেন করেন, তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেই সমাবেশে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের চেয়ার ছুড়োছুড়িই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। এতে প্রথম পরীক্ষায় অনুর্ত্তীর্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের ফাটাকেষ্ট খ্যাত এই নেতাকে।  উপনির্বাচন ঘিরে আলোচানয় থাকলেও তিনিও অনেকটা চুপচাপ আছেন এখনো। 

সাবেক মেয়র মনজুর আলম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় দীর্ঘদিন কাউন্সিলর ছিলেন । ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে টানা তিনবারের  মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে আ. জ . ম. নাছির উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযুগে নির্বাচন বর্জন করেন। এরপরই অনেকটা বলে-কয়ে রাজনীতি থেকে অবসরে যান। বছর ঘুরতেই ফের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মনজুর আলম। তিনি বলেন, ‘এখনো তো মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়নি। আমি এখনো চিন্তা করিনি, মনোনয়ন ফরম দেওয়া শুরু হলে তখন দেখা যাবে। তাছাড়া মনোনয়ন দেওয়ার মালিক ,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

এই তিন বড় নেতার বাইরে মনোনয়নের দৌড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন যেুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করায় মামলায় জড়ান তিনি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৪ বছর জেল খাটেন। এই আসনে গেলো নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন মাহমুদুল। তবে এবার নিজেকে মাঠের ত্যাগী রাজনীতিবীদ দাবি করে মনোনয়নের বিষয়ে আশাবাদী তিনি। বলেন, ‘আফছার ভাই মারা গেছেন, আমরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠিতে পারিনি। আমি এখন মনোনয়নের বিষয়ে বলতে চাচ্ছিনা। তবু তৃণমূলের কর্মী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে আমি বৃহদ পরিসরে কাজের সুযোগ পাব। আমি মাঠের কর্মী, ১৯৭৫ সালে মৌলভী সৈয়দসহ আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে কারাভোগ কিরেছি চার বছর। আমার বাবা-ভাইকেও কারাভোগ করতে হয়েছে আমার জন্য।’

মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুও। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। যুবলীগের রাজনীতি ছেড়ে এখন আওয়ামীলীগে সক্রিয় তিনি। মনোনয়ন দৌড়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই ধরা হচ্ছে তাকে। নির্বাচনে নিজের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই আসনে আমার সাংগঠনিক বিচরণ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ইউনিট – ওয়ার্ড – মহানগর ছাত্রলীগে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন কালে রাজনৈতিক কঠিন সংগ্রাম গুলোতে আমি এই আসনেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করেছি। বিভিন্ন দুর্যোগ তথা সম্প্রতি করোনা কালীন সময়েও সার্বক্ষণিক ভাবে  সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এই এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম। এলাকার সাধারণ মানুষও আমাকে তাঁদের লোক মনে করে। এইটাই আমার শক্তি, আমি মনোনয়ন চাইব,  মনোনয়ন দেওয়ার মালিক আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে শিরোধার্য।’

যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদও সক্রিয় হচ্ছেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। নগর আওয়ামীলীগের পরবর্তী সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রাত্যশী তিনি। চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আলোচনায় আছেন তিনিও। ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘মনোনয়ন দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওনি যাকে যোগ্য মনে করেন মনোনয়ন দিবেন। তবে সাংগঠনিক কর্মী হিসেবে প্রত্যেকের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে, আমিও চাইব। আমি মনোনয়ন পেলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করব।’

প্রয়াত সংসদ সদস্য আফছারুল আমিনের ভাই এরশাদুল আমিনকেও মনোনয়নের দৌড়ে যোগ্য মনে করছেন অনেকে। ১৯৯১ সালের বন্যায় বড় ভাই আফছারুল আমীনের সাথে কাজ করেছেন বলে দাবী তার। তিনি বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের পাশাপাশি আমিও রাজনীতি ও জনসেবায় সক্রিয় ছিলাম। বড় ভাইয়ের সাথে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য কাজ করেছি। তাছাড়া ছাত্র জীবনে আমি এম ই এস কলেজে ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার বড় ভাই অনেক অসমাপ্ত কাজ রেখে মনে বড় দুঃখ-কষ্ট নিয়ে চলে গেছেন। তার অসমাপ্তা কাজ সমাপ্ত করার জন্য আমরা পরিবার থেকে একজন মনোনয়ন চাইবো।’

এছাড়াও মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনায় আছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম। তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেকটা শূন্য।  তবুও আওয়ামী লীগ থেকে তিনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে  জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 

প্রয়াত সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের ছেলে ফয়সাল আমিনসহ অনেকেই। তাদেরও আস্তা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। তবে আফছারুল আমীনের পরিবার থেকে যে কোনো একজন মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধন্ত হয়ওয়া ওই পরিবার থেকে এরশাদুল আমিনকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফয়সাল আমিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হয় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।  সেই হিসেবে এই আসনকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেই দেখেন অনেকে। তবে এই উপনির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপি বা অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের কারো কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে সম্প্রতি মারা যান চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমিন। তার মৃত্যুতে নগরীর ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর থানা এলাকায় সিটি করপোরেশন ৮ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে এই আসনে উপনির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই এই আসনে উপনির্বাচনের দিন ধার্য্য করা হয়েছে। 

একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হতে বাকী আছে ৭ মাসের কিছু বেশি। তাছাড়া মেয়াদের শেষ তিন মাসে সংসদ নির্বাচনের বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে দ্বিতীয় দফায় যিনি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন, এমপি হিসেবে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে ৫ মাস সময় পাবেন তিনি। তবে বলা হয়ে থাকে উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মানেই পার্থীই পরবরর্তী সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকেট নিশ্চিত থাকা।

আজকের সারাদেশ/১৩জুন/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা