আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
অবশেষে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
রোববার রাত ১১ টার পর থেকে জোয়ার শুরুর পর আমতোয়া, নাপিতের ঘাট, আজিমের ঘাট ও মাছোয়া ঘোনা এলাকায় নিষিক্ত ডিম পাচ্ছেন জেলেরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম।
তিনি বলেন, ‘এখনো জোয়ার পুরোপুরো আসেনি। এখন গড়দোয়ারা এলাকা থেকে শুরু উত্তর মাদার্শার মাঝামাঝি এলাকায় ডিম পাচ্ছেন জেলেরা। সম্পূর্ণ জোয়ার হয়ে গেলে তখন সব জায়গায় ছড়িয়ে যাবে।’
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে হালদা থেকে ফিরেছি, মা মাছ ডিম ছেড়েছে এখনো নদীর উপরের দিকে অর্থাৎ আমতোয়া, নাপিতের ঘাট, আজিমের ঘাট ও মাছোয়া ঘোনা এলাকায় ডিম পাচ্ছেন জেলেরা। জোয়ারের সাথে সাথে ডিম ছড়িয়ে পড়বে।’
রাতে সংগ্রহ করা ডিম সকালেই হ্যাচারিতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘রাতভর ডিম সংগ্রহ করে সকালে নিজস্ব হ্যাচারিতে নিয়ে যাবে জেলেরা। সেখানে ১৮ ঘন্টা পর ডিম থেকে রেনু হবে। ওরা তিনদিন ধরে রেনুগুলোকে নার্সিং করবে। এরপর পোনায় পরিণত হবে সেগুলো। অর্থাৎ সংগ্রহের ৯৬ ঘন্টা পর মা মাছের ডিম বিক্রয়যোগ্য পোনায় পরিণত হবে।’
এর আগে চলতি বছরের ১৭ মে এবং রোববার সকালে হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা নদী দেশে স্বাদু পানির কার্পজাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হালদা নদী চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে কর্ণফুলী নদীতে। জালুবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেওয়া কমেছে বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার এই নদীতে। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি, গেলো বছরে তা কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি৷
আজকের সারাদেশ/১৯জুন/এএইচ