বিকাল ৩:৫৭, বুধবার, ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিম ছেড়েছে মা মাছ, ঈদের খুশি তাই হালদা পাড়ে

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আষাঢ়ের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদায় কাঙ্খিত ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এর ফলব গত রাত থেকে হালদা পাড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। ডিম সংগ্রহকারীদের মনে যেন ঈদুল আজহার আগেই চলে এল ঈদের খুশি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম। তিনি বলেন, গতরাত ১১ টা থেকে ভোররাত পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করেছেন জেলেরা। এবার বেশ ভালোই ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এ কারণে যথেষ্ট পরিমান ডিম পেয়েছেন সংগ্রহকারীরা। তবে পরিমাণটা আমরা এখন বলতে পারছি না। সবগুলো হিসাব করে জানানো হবে।

ডিম সংগ্রহকারী ও পোনা ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াছ বলেন, এই সময়টির জন্য আমরা প্রায় দুই মাস অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে গতকাল রাতের জোরারের সঙ্গে সঙ্গে সেই কাঙ্খিত ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এবার ভালো ডিম পেয়েছি।

উত্তর মাদার্শা এলাকার শাহমাদারি হ্যাচারির এই সমন্বয়ক অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, অনেকদিন অপেক্ষার পর ডিম পেয়ে সবার মাঝে খুশির হাওয়া বইছে, তা দেখে আমার কাছে ঈদের মতো লাগছে। ইনশাআল্লাহ এবার অনুকুল পরিবেশে ডিমগুলো নার্সিং করব। পরে সারা বছর বিক্রি করব।

হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার মধ্যরাতে জোয়ারের সময় নদীর আমতুয়া পয়েন্টে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। এরপর এই ডিম জোয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাপিতের ঘাট, আজিমারঘাট, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী সংলগ্ন পুরালি স্লুইজ গেইট, নোয়াহাট সহ হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি আরও বলেন, রোববার সকালে অমাবস্যা শেষ হওয়ায় রাতের জোয়ারে ডিম ছাড়ার শতভাগ সম্ভাবনা ছিল। তাই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, বালতিসহ ডিম ধরার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন। এই বছর সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়ায় হালদা নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ডিমসংগ্রহকারী সহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে।

এর আগে শনিবারের বজ্রপাতসহ ব্যাপক বৃষ্টির প্রভাবে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয় বলে জানান এই হালদা গবেষক।

রাতে সংগ্রহ করা ডিম সকালেই হ্যাচারিতে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ভোররাত পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করে সকালে নিজস্ব হ্যাচারিতে নিয়ে যান জেলেরা। সেখানে ১৮ ঘন্টা পর ডিম থেকে রেনু হবে। ওরা তিনদিন ধরে রেনুগুলোকে নার্সিং করবেন। এরপর পোনায় পরিণত হবে সেগুলো। অর্থাৎ সংগ্রহের ৯৬ ঘন্টা পর মা মাছের ডিম বিক্রয়যোগ্য পোনায় পরিণত হবে।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ মে এবং রোববার সকালে হালদায় নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।

হালদা নদী দেশে স্বাদু পানির কার্পজাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে হালদা নদী চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে কর্ণফুলী নদীতে। জালুবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে মা মাছের ডিম দেওয়া কমেছে বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার এই নদীতে। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। ২০২১ সালে হালদা থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় সাড়ে আট হাজার কেজি, গেলো বছরে তা কমে হয় সাড়ে সাত হাজার কেজি৷

আজকের সারাদেশ/১৯জুন/এসএম

সর্বশেষ সংবাদ

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত