আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামে শ্বাস রোধ করে এক নারী ও তার শিশু সন্তানকে খুনের ঘটনায় তার স্বামী ও সতিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে তাদের ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডের অর্থ অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক বেগম সিরাজাম মুনিরা এই দণ্ডাদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীর্ঘতম বড়ুয়া।
দণ্ডিত দুই আসামি হলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার মো. বদু মিয়ার ছেলে আব্দুল বারেক (৩৮) এবং তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম ওরফে লাকী (৩৬)।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা এলাকার রহিমা বেগম ওরফে সুমির সাথে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার আব্দুল বারেকের বিয়ে হয়। পেশায় বাস চালক বারেক এর আগেও ফাতেমা বেগম ওরফে লাকী নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর দুই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। বিয়ের পর থেকে সুমিকে নানা অযুহজাতে মারধর করতেন স্বামী-সতিন।
বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর বারেক ও সুমি দম্পতি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্ম দানের ৫ থেকে ৬ দিনের মাথায় গরম পানি নিক্ষেপ করে সুমিকে হত্যার চেষ্টা করেন সতিন লাকী। এতে সুমিকে তার বোন জহুরা নিজ বাসায় নিয়ে গেলে এক মাস পর আর কখনো কোনো অত্যাচার করবেনা আশ্বাস দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যায় বারেক।
এরমধ্যে অন্যত্র বাসা নিয়ে থাকতে শুরু করেন দ্বিতীয় স্ত্রী লাকী। তবে তার ১৮ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান ছিল। গার্মেন্টসে চাকরীর সুবিধার জন্য শিশুটিকে সুমির কাছে রাখতেন তিনি। মাঝে মধ্যে স্বামীর বসায় গিয়ে সন্তানকে দেখার পাশাপাশি স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ নিতেন।
২০১১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে স্বামীর বাসায় যান লাকী। এসময় সুমি, বারেক ও বারেকের বোন মরিয়ম ছাড়া বাসার বাকী সদস্যরা লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে ছিল। ওইদিন লাকীকে ভরণপোষণের টাকা দিতে না পারায় তিনি স্বামীর বাসায় থেকে যান। রাতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন ভোরে বাস চালানোর জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যান বারেক। পরে বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তিনি সকালে বাসায় ফিরে আসেন।
একই সময়ে ২৬ শে মার্চ বোনদের সাথে গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা যাওয়ার কথা ছিল সুমির। কিন্তু ওইদিন সকাল পৌনে দশটার দিক সুমি তার বোন জহুরাকে ফোন করে স্বামী-সতিন মিলে তাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না বলে জানায়। এরপর দুপুর দুটায় জহুরা খবর পান তার বোন সুমি ও সাত মাস বয়সী ভাগিনা হৃদয় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় বাসায় মৃত পড়ে আছে। এতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি। পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন লাকী ও বারেক।
এই ঘটনায় সুমি ও তার শিশু সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সুমির স্বামী বারেক, সতিন লাকী ও ননদ মরিয়মকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন জহুরা। মামলায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে পরিকল্পিতভাবে সুমিকে মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধে এবং শিশু হৃদয়কে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সাথে মামলা থেকে আসামি মরিয়মকে অব্যহতির সুপারিশ করা হয়।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীর্ঘতম বড়ুয়া বলেন, ‘এই মামলায় আদালত ২০১৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। এর ১ বছর পর চার্জ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।’
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
আজকের সারাদেশ/২২জুন/এএইচ