এম. মোর্শেদ, চট্টগ্রাম
ফুটপাতের কাপড় বিক্রি করেন মোহাম্মদ আসলাম সিকদার। বায়েজিদ এলাকার এই বাসিন্দা অক্সিজেন সবজির বাজারে এসেছেন টমেটো কিনতে। বাজারে ঢুকেই দাম শুনে ‘থ’ হয়ে গেলেন। এক কেজি টমেটোর দাম চাই ২৮০ টাকা। না পারতেই বাধ্য হয়ে অন্য দোকান থেকে দুইটি টমেটো নিলেন ৬০ টাকায়।
আসলামের বলেন, ফুলকপি দিয়ে টমেটো ভাঁজা খেতে বাজারে টমেটোর কিনতে এসেছি। একটি দোকানে গেছি দাম চাই কেজি ২৮০ টাকা। একই বাজারে অন্য দোকানে গিয়ে দেখি ২৬০ টাকা বিক্রি করছে৷ সেখান থেকে দুটো টমেটো নিয়েছি ৬০ টাকায়। ভাবছি আরও বাড়িয়ে কিনবো, কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সম্ভব না।
টানা বৃষ্টির ও বন্যার প্রভাবে সরবরাহ কমায় উত্তাপ ছাড়াচ্ছে নগরীর সব সবজি, মুরগির ও মাছের বাজারে। ডিমের বাজারে যেন আগুন। গতসপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। দুদিনের ব্যবধানে ডিমের হালিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৪ টাকা। এদিকে কেজিতে আরও ১৫ টাকা দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ঠেকেছে ৮০ টাকায়, একই রূপ পেঁয়াজের বাজারেও।
শুক্রবার (১০ আগস্ট) নগরীর অক্সিজেন, আতুরারডিপু কাঁচাবাজার, ষোলশহর কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোন সবজি। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বেগুন ৫০, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০, পটল ৫০, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কচুর ছড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২৪০, গাঁজর ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে দুগুণ দামে বরবটি বিক্রি হলেও আগের দাম ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে আলু।
আডুরারডিপু বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. মাসুদ বলেন, ছুটির দিনে সকালে বাজার করতে এসে দেখি ৫০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। আগে ৫০০ টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদের ৭-৮ কেজি সবজি পেতাম। আজকে ৬ কেজি সবজি নিতেই ৫০০ টাকা দিতে হল।
একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মানিক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি। সব সবজির ক্ষেত পানির নিচে। আমাদের এখন বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিতেও সে অনুযায়ী দাম নিতে হচ্ছে।
অক্সিজেন বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে মাঠে সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে সবজি না আসায় বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে প্রায় সব ধরনের সবজির কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মুরগী ও ডিমের বাজার:
কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-৮০ টাকায়। ২০ টাকা বেড়ে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। ৩০ টাকা বেড়ে পাকিস্তান বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকায়। ৩০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে।
দুদিনের ব্যবধানে নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে মুরগীর ডিমের বাজার। যে ডিম দুদিন আগেও হালিতে ৫০ টাকা ছিল তা আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৪ টাকায়। প্রতি ডজন ডিমে ৩০ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
ডিম কিনতে আসা রিকশা চালক নবির মিয়া বলেন, আমরা তো মাছ-মাংস খাইতে পারি না। ডিম দিয়ে ভাত খাই সেটিও দেখি অনেক দাম। গত দুইদিন আহে এক জোগা ডিম কিনেছি ২৪ টাকায়। আজকে নাকি জোড়া ৩০ টাকা। কি আর বলব, কারে বলব। এখানে কিছু হলেই দাম বেড়ে যায়। কয়েকদিন বৃষ্টিতে বন্যা হয়ছে, তরকারি দাম বাড়ছে বুঝলাম৷ কিন্তু ডিম কি ক্ষেতে হয় যে ডাম বেড়ে যেতে হবে!
একই কথা বলছেন মুরগীর দোকানে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জিহানও। তিনি বলেন, আগে দেখতাম মাসে বা বছরে দাম বাড়তো। এখন রাতে একদম আবার সকালে দেখা যায় আর ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে।
মুরগী বিক্রেতা রশিদ জানান, বাজারে সব সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা থাকে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে এ সপ্তাহে মুরগির সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
মাছের বাজার:
মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। কেজি প্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা পযর্ন্ত বেড়েছে মাছের বাজারেও। প্রতিকেজি তেলাপিয়া মাছ ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকায়, পাঙ্গাশ ১৬০ থেকে ১৭০, আকারভেদে প্রতিকেজি রুই ৫০ টাকা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। তাছাড়া কাতল আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪০০, মৃগেল ২২০, কোরাল ৮০০ ও চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে এক থেকে দেড় কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকায়। আকারে ছোট্ট ইলিশ কিনতেও কেজিতে ৮০০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
কর্ণফুলী বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন বিদেশ ফেরত আফছার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আসছি দুদিন হচ্ছে। এখানে টাটকা পুকুরের মাছ পাওয়া যায় শুনে আসলাম। কতক্ষণ ঘুরে ঘুরে কয়ে দোকান দেখে একটি কাতলা মাছ নিয়েছি ৪০০ টাকা কেজি করে। দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাতে সব ধরনের সবজিতে ২০-৪০ টাকার দাম বাড়িয়েছে। ডিম, মাছ, মুরগী কোনটাতেও দাম কমতে নেই। বরার বাড়তেই থাকে। কিছু হলেই সিন্ডিকেটে দাম বাড়িয়ে দেয় বলছেন ক্রেতারা।
এদিকে আতুরার ডিপু পেঁয়াজ গলির খুরচা দোকানগুলতো ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। দোকানভেদে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
সরবরাহ কমায় চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি রসুন ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আদা বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। আজ প্রতিকেজি মায়ানমারের আদা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা এবং ইন্দোনেশিয়ার আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা মো. ইলিয়াছ আলী বলেন, স্থলবন্দরে বাড়তি দরে পেঁয়াজ, রসুন বিক্রি করায় আমাদের পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে। আশা করছি তিন চারদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে দাম আবার কমে যাবে।
এসএম