আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
ভয়ভীতি, জেল-জুলুম করে এই লড়াই দমন করা যাবে না জানিয়ে এবারের লড়াইকে ‘জীবনপণ’ লড়াই বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নির্যাতন-নিপীড়ন করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যতই কারাগারে ঢুকাও, গুলি করো, নির্যাতন করো, লাঠিচার্জ করো, টিয়ারগ্যাস মারো, এবার অধিকার আদায় না করে মানুষ ঘরে ফিরবে না। এবার লড়াই জীবনপণ লড়াই। ভয়ভীতি, জেল-জুলুম করে এই লড়াই দমন করা যাবে না।’
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে গণমিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক দফা এক দাবি- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদের আর কোনো দাবি নেই।
‘তারা মনে করেছে যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারও একটা নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় টিকে যাবে। বাংলার মানুষ তা হতে দেবে? আমরা কেউই তা হতে দেবো না।’
বিএনপির এই পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন জুমার নামাজের পরপরই বিএনপি নেতা-কর্মীরা সুবাস্তু টাওয়ার ও আশপাশ এলাকায় ভিড় জমান। চলতে থাকে তাদের মিছিল ও মুহুর্মুহু স্লোগান। এর ফলে প্রগতি সরণির ওই এলাকায় দেখা দেয় যানজট।
সুবাস্তু টাওয়ারের বিপরীতে সড়কে গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারা এমন দুই দলকে নিবন্ধন দিয়েছে যাদের কেউ চেনে না। এদের দিয়ে তারা নির্বাচন-নির্বাচন খেলা খেলতে চায়। এবার আর এই খেলা খেলতে দেয়া হবে না। আন্দোলনে সরকারের পতন করা হবে। মানে মানে সরে না গেলে রাজপথেই সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
সমাবেশে মির্জা ফখরুল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্লোগান ধরেন। তিনি বলেন, ‘জোরে বলতে হবে, এটাকে গগনবিদারী করতে হবে। গণভবনে পৌঁছাতে হবে, সংসদ ভবনে পৌঁছাতে হবে। আজকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা একসঙ্গে আওয়াজ তুলেছে- এই স্বৈরাচারী সরকার নিপাত যাক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিচার বিভাগ ব্যবহার করে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের জেল দেয়া হচ্ছে। তবে যত নির্যাতন, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হোক আন্দোলন থামানো যাবে না। জনগণ এবার তাদের দাবি আদায় করে নেবে।
‘দেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এবারের লড়াই জীবনপণ লড়াই। একটাই দাবি- শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। কোনোভাবেই আমাদের আটকানো যাবে না।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষ তারেক রহমানের নেতৃত্বে লড়াইয়ে নেমেছে। লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করতে হবে। এ লড়াই তখনই শেষ হবে, যখন গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাস্তায় থাকতে পারবেন? শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত থাকতে পারবেন? দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশ আজ প্রস্তুত। স্বৈরাচারের হৃৎকম্পন শুরু হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে জয়ের পথে চলতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত এই গণমিছিলে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ করা গেছে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আতাউর রহমান ঢালী, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
আজকের সারাদেশ/১১আগস্ট/এএইচ