আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির কথা জানানো হয়েছে।
কিন্তু সেই কমিটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই আবার ছাত্রত্ব নেই। বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। কমিটির পাঁচজনের তিনজনই সভাপতি পদ পাওয়া মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসীনের বিপক্ষে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, মহসিন মাঠে ময়দানে সেভাবে সক্রীয় ছিলেন না, তদবির করেই সভাপতি পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন।মহসিনের উত্থানের পেছনে তাঁরা বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতার হাত দেখছেন!
ছাত্রত্ব নেই চারজনের:
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসীন। ৮ বছর আগেই তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৭ বছর আগে। কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি করা হয়েছে অর্থনীতি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের মামুনুর রশিদ মামুনকে। এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ইতিহাস বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মো. ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। তাঁদের মধ্যে সাজ্জাদ শুধু নিয়মিত ছাত্র। তিনি স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত আছেন। বাকি দুজনেরও ছাত্রত্ব নেই।
অছাত্রদের কেন পদ দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন এই নেতারা ত্যাগি, তাই পদে বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, চবিতে কমিটি হলো ৭ বছর পর। ফলে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে থাকার বয়স পার করেছেন। তাই ছাত্রত্ব শেষ হলেও কোনো ত্যাগী নেতা যেন পদবঞ্চিত না হন, সেই চেষ্টা করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, এক-এগারোর পর থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বহু নেতা-কর্মী সংগঠনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আন্দোলনের সময় অনেকে আহত হয়েছেন, মামলা খেয়েছেন। এমন সামনের সারিতে থাকা ৫ জনকে দিয়ে চবি ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে পদপ্রাপ্তদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে।
তদবির করে সভাপতি:
কমিটি ঘোষণার পর পরই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। সভাপতি আলাউদ্দিনকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া তিন নেতা।
সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমি সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম। কিন্তু আমার ত্যাগ এবং কাজকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। আর আমার চেয়ে যোগ্য কাউকে সভাপতি করা হলে তাও মেনে নিতাম। কিন্তু এখন মানতে পারছি না।’
সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিনও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, মাঠে-ময়দানে না থাকলেও তদবিরের মাধ্যমে সভাপতি হয়ে গেছেন একজন। লিখিতভাবে আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।
সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের বক্তব্যও এই দুজনের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পালন করতে গিয়ে ‘নির্যাতনের শিকার’ মামুন নিজেও সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।
তবে সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মহসীন তিন নেতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটা কমিটি দেওয়ার আগে সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হয়। তারপর কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের কমিটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
অতীতে আমি দলের জন্য কি করেছি তা সবাই জানেন। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও শহীদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বছরের ১১ নভেম্বর ছাত্রদলের ২৪৩ সদস্যের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।
মহসিনের পেছনে মীর হেলাল:
মহসিনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় হলেও বাবার চাকরির সূত্রে তিনি বড় হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তার সভাপতি হওয়ার পেছনে এই ‘স্থানীয়’ প্রভাব তো কাজে দিয়েছেই। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালের পেছনে রাজনীতি করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘণিষ্ট হিসেবে পরিচিতি থাকা মীর হেলাল উত্তর জেলার বিএনপির রাজনীতিতে এখন বেশ প্রভাবশালী। তার চাওয়াতেই মহসিন চবির সভাপতি হয়েছেন বলে দলের মধ্যে আলোচনা আছে। সেটি মহসিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসেও পরিষ্কার। সভাপতি হওয়ার পর মীর হেলালের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি করায় আমার প্রিয় নেতা, রাজনৈতিক অভিভাবক, দেশনায়ক তারেক রহমানের বিশ্বস্ত হাতিয়ার, বীর চট্টলার অহংকার, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনার দিকনির্দেশনায় আমার রাজনৈতিক পথ চলা। আমৃত্যু আপনার স্নেহধন্য হয়ে পাশে থাকব, ইনশাআল্লাহ।’
অন্যদিকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়া আব্দুল্লাহ আল নোমান বিএনপির দুই প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান আর গোলাম আকবর খন্দকারকে ‘মেনটেইন’ করতেন। আর সিনিয়র সভাপতি হওয়া মামুনুর রশীদ বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী। কিন্তু মীর হেলালের তদবিরের সামনে এই তিন প্রবীণ শীর্ষ নেতার ‘অনুরোধ’ কাজে দিল না।
আজকের সারাদেশ/১২আগস্ট/টিএইচ/এএইচ