সন্ধ্যা ৭:৫১, মঙ্গলবার, ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে বন্যার ক্ষতি ‘কিছুই না’ বললেন প্রকল্প পরিচালক

হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সাতকানিয়ার কেরানিহাটের একটু আগেই কেবিএম ইটভাটা। এই ইটভাটার কাছাকাছি এলাকায় মহাসড়ক ক্রস করেছে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। মহাসড়ক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের রেললাইন ধরে দুই কিলোমিটারের এগুলোই তেমুহনী এলাকা৷ এই এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার রেললাইনের পাথর সরে গেছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়। রেললাইনের নিচের পাথর ও মাটি সরে গিয়ে  চার থেকে পাঁচটি স্থানে তৈরি হয়েছে বিশালাকার গর্ত। এতে বিভিন্ন স্থানে মাটি দেবে গিয়ে বেঁকে গেছে রেললাইন। সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা বড় এই পকল্পের ক্ষতির পরিমাণ বেশ বড় অংকের বলে ধারণা করা হলেও প্রকল্প পরিচালকের দাবি এই ক্ষতি নিতান্তই সামান্য। বরং গণমাধ্যমই এই অল্প ক্ষতিকে ভয়াবহ দাবি করে তিলকে তাল বানিয়েছে।

দোহাজারি- কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘এটার এখন যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা এক দেড় কোটি টাকার। শুধু একটু পাথর সরে গেছে, আপনারা তো তিলকে এমন তাল করছেন মিডিয়া, মনে হচ্ছে যে আমার লাইন ভেঙে চলে গেছে। কিছু পাথর গেছে, পাথরটা ওখানে বসানো হবে- শেষ।’

পাথর সরে যাওয়াটা নিতান্তই মামুলি ক্ষতি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা কিছুই না, এটা আমরা খুব সহজে ঠিক করতে পারব।’

এই ক্ষতির দায়ও রেলওয়ের নয় বলে জানান তিনি। ক্ষয়ক্ষতির ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই বহন করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো এখনো প্রকল্প বুঝে নিইনি, এটা তো এখনো ঠিকাদারের অধীনে। সেক্ষেত্রে ব্যায় বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’

এমনকি চালু রেললাইনেও এভাবে পাথর সরে যায় বলে দাবি প্রকল্প পরিচালকের। তিনি বলেন, ‘আমাদের চালু লাইনে এরকম ক্ষতি হয়। আমাদের যে লাইনগুলো চালু আছে ঢাকা-চট্রগ্রামে, তারপর ঢাকা-সিলেট ওই লাইনে এগুলো হয়। চালু লাইনেও হয়।’

এপ্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার উদাহরণ টেনে সেখানেও বন্যায় রেললাইনের পাথর সরে গিয়ে আস্ত রেল কাত হয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি অর্থে নির্মিত হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। তৈরি হয়েছে প্রায় ৯০ কিলোমিটার রেললাইন। এখনো বাকী আছে ১১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। তবে এই রেললাইনকেই এই অঞ্চলে (১)দক্ষিণ চট্টগ্রাম) সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার জন্য দুষছেন স্থানীয়রা। রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ব দিকে বাস ৪৫ বছর বয়সী মো. সেলিমের। সোমবার দুপুরে দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুধবার (৯ আগস্ট) দিনগত রাতে এখানে বেশী পানি হয়ছে। পূর্বদিক থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসছে। আমরা দোতলাতে ছিলাম,ওখান থেকে পানির স্রোত দেখছি। রেললাইনের পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে পানির ৪ থেকে ৫ ফুট ব্যবধান ছিল। পূর্ব দিকে পানি বেশী ছিলো। সেদিক থেকে ঢলের পানি আসছে।’ 

সেলিমের ধারণা পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকায় পানি আটকে ছিল। পর্যাপ্ত কালভার্ট থাকলে পানি আটকে থাকত না বলে দাবি তার। 

সেলিম জানান, ১৯৯৯ সালেও এরকম ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তবে সেসময় পানি আটকে ছিলনা, তাই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এবার রেললাইনের কারণেই অতিরিক্ত পানি হয়েছে বলে দাবি তার। 

রেললাইন বন্যার একটি কারণ হলেও হতে পারে বলে ধারণা চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হকের। তিনি বলেন, ‘ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেন জলাধারে সড়ক নির্মাণের সময় ফ্লাইওভারের মত করে নির্মাণ করা হয়। এতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। আসলেই এটা, যতবেশি কালভার্ট, পানি প্রবাহ তত স্বাভাবিক। তাতে সড়ক বা অন্য কোনো স্থাপনাও ঠিক থাকবে।’

রেললাইনের কারণে বন্যার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি প্রকল্পটির পরিচালক মফিজুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রেললাইনের দুপাশে কিন্তু পানি সমান। দুপাশে পানি সমান থাকা মানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট রয়েছে। রেললাইনের কারণে এক পাশের পানি আটকাতে পারে, উভয় পাশের পানি তো আর আটকাবে না৷ মূলত পানি প্রবাহের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। তাই পানি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে সারতেছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলে পানি থাকবে না।’

তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত পেলে আরো কিছু কালভার্ট তৈরি করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই বন্যা আবার হবে কিনা সেটা তো শিউর না। এরকম বন্যা তো গত একশ বছরে হয়নি। যদি সবাই বলে যে না বন্যা হবে ভবিষ্যতে কারণ এখন ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে। তাহলে বিশেষজ্ঞরা যদি মতামত দেয় যে কিছু কালভার্ট করা দরকার, সেক্ষেত্রে আমরা তো অবশ্যই করব। আমরা তো এটাকে ঝুঁকির মধ্যে রাখতে পারি না। যদি বিশেষজ্ঞরা বলে যে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে হবে না।’

বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্তের দিকে নয়, বরং অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দিকে নজর সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, ‘এটা তো আমাদের ২ সপ্তাহ লাগবে ঠিক করতে, এটা তো সামান্য কাজ, আধা কিলোমিটারের। ১০০ কিলোমিটার আমাদের রেললাইন করতে হবে, সেটা নিয়ে আমি চিন্তা আছে। এটা নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নাই।  এটা ঠিকাদার করে ফেলবে, এটা ছোট্ট একটা স্পেস, ৪০০ মিটার মাত্র। ১০০ কিলোমিটার পুরোটা রেডি করব কীভাবে এখন সেটাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।’

২০২৪ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হতে যাওয়া এই রেললাইনে আগামী সেপ্টেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখনো ১০-১২ কিলোমিটার বাকী আছে৷ ওটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে ইনশাআল্লাহ,  আমরা সেভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামে। বন্যায় অন্তত ২০ জনের প্রাণহানিসহ কৃষি অন্যান্য খাতে আর্থিক ক্ষতি হয় শত কোটির বেশি। 

আজকের সারাদেশ/১৫আগস্ট/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এখনো দাপুটে আওয়ামী লীগের শাহ আমানত ও জান্নাত ট্রেডিং

আ.লীগের ইন্ধনে শহীদ তানভীরের ভাইকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

আইটিডি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে চবির সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন

চবিতে ‘ক্যারিয়ার ইনসাইটস ও লাইফ লেসন’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

চবির টাঙ্গাইল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত

পাহাড়ে সেনাশাসন নয়, অপতৎপরতা প্রতিহত করতেই সেনাবাহিনী

চবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন

যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা