আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ১০ জন আটকের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় খুলনা মেডিকেল কলেজে (খুমেক) লেখাপড়া করেছে এমন ১১ জন শিক্ষার্থীর একাডেমিক তথ্য নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তথ্য নেয়ার পর তাদের মধ্যে থেকে সিআইডি তিনজনকে আটকও করেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস আগে সিআইডি থেকে অধ্যক্ষকে চিঠি দেয়া হয়। তাতে ২০১৫ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খুমেকে ভর্তি হয়েছেন এমন ১১ শিক্ষার্থীর একাডেমিক তথ্য চাওয়া হয়। গত ১৬ জুলাই অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে ওই ১১ শিক্ষার্থীর তথ্য সিআইডিকে দেয়া হয়েছে।
ওই ১১ জনের মধ্যে থেকে গত শুক্রবার দুপুরে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন শার্মিষ্ঠা মণ্ডল, নাজিয়া মেহজাবিন তিশা ও মুস্তাহিন হাসান লামিয়া। এরা তিনজনই এমবিবিএস পাস করেছেন। নাজিয়া মেহজাবিন তিশা ইতোমধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উচ্চতর ডিগ্রি এফসিপিএসের প্রথম ধাপও উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এ ছাড়া বাকি ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ জন এখনো এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ২ জন শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তবে ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। একজন এখনো শেষ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কোনো শিক্ষকই তাদের মেধা ও যোগ্যতা সম্পর্কে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে চাননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে যেসব শিক্ষার্থী খুমেকে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অনেকের মেডিকেলে পড়ার মতো ন্যূনতম যোগ্যতাও ছিল না। ওই ব্যাচে খুলনা মেডিকেলে এমন ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন, যারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পাস করেছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. দীন-উল-ইসলাম বলেন, ‘সিআইডির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তথ্য দিয়েছি। ওই সব শিক্ষার্থী যদি ফাঁস হওয়া প্রশ্নে এখানে ভর্তি হয়ে থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় আইন মোতাবেক তাদের শাস্তি হোক।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই শিক্ষার্থীরা খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ওই কোচিং সেন্টারটির উপদেষ্টা ডা. ইউনুস খান তারিমকেও শুক্রবার দুপুরে খুলনা থেকে আটক করেছে সিআইডি।
ডা. তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) খুলনা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখার সদস্য।
খুলনার সিমেট্রি রোডে একটি বহুতল ভবনে তার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার রয়েছে। কেবল খুলনা ও আশপাশের জেলা নয়, দূরের বিভিন্ন জেলার শিক্ষার্থীরাও এখানে এসে মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতির কোচিং করেন। এই কোচিং সেন্টার ঘিরে তিনি খুলনার রয়েল মোড়ে ফাতিমা হাসপাতালের ভবনে একটি ছাত্রাবাসও গড়ে তুলেছেন। চলতি বছরে তিনি নিজেকে ৫ হাজার চিকিৎসক তৈরির কারিগর হিসেবে পোস্টার লাগিয়ে ওই কোচিংয়ের প্রচার চালিয়েছেন।
২০১৯ সালে মেডিকলে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে দেশজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ করে প্রশাসন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ওই বছরের ১০ অক্টোবর খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান হোসেন খান খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করেন। এরপর তাকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে এক দিন পর ছেড়ে দেয়া হয়। তার পরের বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিবছর হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পেলেও ওই কোচিং সেন্টার তেমন কোনো সফলতার মুখ দেখেনি।
ডা. ইউনুস খান তারিম সিআইডির হাতে আটক হওয়ার এক দিন আগে গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদক তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে প্রশাসন আমাকে আটক করেছিল। তারপর থেকে অন্যান্য কোচিং সেন্টার আমার বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই আমি মেধাবী শিক্ষার্থী কম পেয়েছিলাম। যে কারণে গত কয়েক বছর জাতীয় মেধায় কেউ তেমন ভালো অবস্থান করতে পারছে না।’
আজকের সারাদেশ/২০আগস্ট/এএইচ