এম. মোরশেদ, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামে এই বছরের বৃক্ষমেলায় সর্বোচ্চ দামের গাছ ছিল ‘ফাইকাস গ্রিন আইসল্যান্ড’। ছোট্ট এই গাছটি ১৯ দিনব্যাপী মেলাকে যেন মাতিয়ে রেখেছে। কেউ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে। কেউ বা আবার গাছের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের একটি ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) নগরীর সিআরবি এলাকায় বৃক্ষমেলার শেষ দিনে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে জান্নাত শপ সিটিজি নামের স্টলটির সামনে।
প্রতি বছরের মতো এবারো মেলায় এসেছে নানা প্রজাতির গাছ। তবে মেলায় সবাই খোঁজ করছে ‘ফাইকাস গ্রিন আইসল্যান্ড’ নামে বেশি দামের এই বনসাই গাছটির। ৪২ বছর বয়সী গাছটির দাম দাম হাঁকছে দেড় লাখের বেশি অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
একই স্টলে পাশাপাশি টবে বসানো রয়েছে ১৬ বছর বয়সা আরেকটি তেতুল বনসাই গাছ৷ এটিরও দাম হেঁকেছে অর্ধ লক্ষ টাকা।
এই বনসাই গাছ সম্পর্কে জানতে জান্নাত শপের মালিক আতুয়াবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ফাইকাস গ্রিন আইসল্যান্ড এই মেলার সর্বোচ্চ মূল্যের বনসাই গাছ। এটি দাম হাঁকা হয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই গাছটি প্রথম আমার মামা সংগ্রহ করেন। তার থেকে বংশ পরম্পরায় বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে। এটি ছোট পাত্রে বনসাই করার নিয়মে ছোট করে রাখা হয়েছে। এই গাছটি মোটামুটি বেশ কয়েকটি মেলায় গিয়েছে।
এবারের মেলায় এই বনসাইটির ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। তবে নির্বারিত দামের কমে আমরা এটি বিক্রি করতে চান না জানান তিনি।
তিনি তেতুল গাছটি দাম চাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। তবে এটি এরমধ্যেই চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী ৪০ হাজার টাকায় কেনার কথা রয়েছে। মেলার পরে নিয়ে যাবেন ওই ক্রেতা।
বনসাই গাছটি দেখে ছবি তুলছেন কলেজ পড়ুয়া নুসরাত। তিনি বলেন, বনসাই গাছ সম্পর্কে আগে জানতাম না। তবে আজকে মেলায় এসে এই গাছ দেখে অবাক হলাম। এত ছোট্ট গাছের বয়স ৪২, তাও আবার অনেক টাকা দাম। তাই ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছি স্মৃতি হিসেবে রাখবো। এত টাকায় তো আর কেনার সামর্থ্য নাই।
ঘুরে দেখা যায়, এবার মেলায় প্রায় অর্ধশত স্টলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নার্সারি, বাগানী, ও সম্পর্কিত পণ্য বিক্রেতাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মেলার স্টল গুলোর সাজসজ্জাতেও রয়েছে দারুণ কারুশৈলী। স্টলগুলো দেখলে মনে হবে, দারুণ ছোট একটি বাগান। দুপাশে সুন্দর সুন্দর গাছ, মাঝ দিয়ে ছোট্ট হাটার রাস্তা। যেন বিরাম সুন্দর।
বনসাই ছাড়াও মেলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, মৌসুমি ফল, দেশি-বিদেশি ফুল, জৈবসার, আধুনিক সেচ পদ্ধতির যন্ত্রপাতিসহ অনেককিছু। এছাড়াও দর্শনার্থীদের আকর্ষণের জায়গায় রয়েছে আমাজান লিলি।
ক্যাকটাস ও ইনডোর প্ল্যান্ট প্রেমীদের জন্যও বৃক্ষমেলা একটি অপূর্ব মিলনমেলা। প্রতিটি স্টলেই ছিল নানা প্রজাতির ক্যাকটাস। পাশাপাশি ইনডোর প্ল্যান্ট ডেকোরেশনের জন্যও ভিন্ন ভিন্ন স্টল ছিল।
ছিল অফিস ডেস্কে কিছুটা সবুজের ছোঁয়া রাখতে ব্যাবহার উপযোগী বাঁশের টব, শহরের ছাদবাগানীদের জন্য বৃক্ষমেলায় প্রয়োজনীয় সবকিছু। জৈব সার থেকে শুরু করে ছাদে গাছের স্বয়ংক্রিয় সেচের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্টলও দেখা মিলেছি মেলায়।
টিকেট ছাড়াই মেলার প্রবেশ থাকলেও। এবারের টানা ভারি বর্ষণে তেমন বেচা বিক্রি হয়নি জানিয়েছে স্টল ও নার্সারী মালিকরা।
এর আগে গত ৩১ জুলাই নগরীর সিআরবি এলাকায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বন বিভাগের আয়োজনে ১৫ দিনব্যাপী এই বৃক্ষমেলা শুরু হয়। তবে চট্টগ্রামে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও বন্যার কারণে মেলায় তেমন বিকিকিনি না হয়নি। তাই স্টল মালিকদের অনুরোধ আর ৪ দিন বাড়িয়ে ১৯ দিনব্যাপী চলে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) শেয় হয়েছে।