আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
বিভিন্ন স্টেশনে ডাস্টবিনের পলিথিন সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিমাসে ১৭ লাখ টাকা করে পরিশোধ করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। কিন্তু পলিথিন সরবরাহ তো দূরের কথা কোন কোন স্টেশনে ডাস্টবিনেরই দেখা মিলেনি। অর্থাৎ পুরো টাকাটাই জলে যাচ্ছে রেলওয়ের!
জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ ও সার্ভিসিং এবং সংরক্ষণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনায় জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের সঙ্গে ওয়াহদিকা সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এজন্য ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে মাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কাজটি রেলওয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ না হলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করছে রেলওয়ে।
এ কাজের জন্য দুই বছর পর পর নতুন টেন্ডার আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও গত ৭ বছর ধরে একজনই কোন টেন্ডার আহ্বান না করে নবায়ন মাধ্যমে রেলওয়ের বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনে কোন পলিথিন সরবরাহ করা হয় না। ডাস্টবিনে পলিথিন ছাড়াই ময়লা ফেলতে দেখা গেছে যাত্রীদের। যাত্রীরা যে যার মতো করে খাওয়া শেষে ময়লা ফেলে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু ওয়াহদিকা সার্ভিসের কোন কর্মচারীকে ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ করতে দেখা যায়নি। কোন স্টেশনে ৫ টি আবার কোনো স্টেশনে ১০ টি পর্যন্ত ডাস্টবিন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেখানে একটি করে পলিথিন থাকার কথা থাকলেও সেটি দেখা যায়নি। এ কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রতি ডাস্টবিনে মাসে ১ হাজার ৯৮৫ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু এসব স্টেশনে ডাস্টবিনের দেখা মিললেও পলিথিনের দেখা মিলেনি।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনে ডাস্টবিন থাকলেও সেখানের ময়লা যথাসময়ে সংগ্রহ করা হয়না। যার কারণে অনেক সময় ডাস্টবিন থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। যদি ডাস্টবিনের ময়লা সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন টাকা পরিশোধ করে থাকে তাহলে সেটি জলে যাচ্ছে। এ কাজের আরও কঠোর তদারকি আশা করছি।
ষোল শহর স্টেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ষোল শহর স্টেশনে আমরা পলিথিন তো দূরের কথা ডাস্টবিনের কোন দেখা পাইনি। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে ময়লা আর্বজনা পড়ে থাকতে দেখেছি। ময়লা সংগ্রহের জন্য যে রেলওয়ে টেন্ডার দিয়েছি সেটি শুনে অবাক হয়েছি।
শুধু তাই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামে বেডিং পোর্টার সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা করে টেকনোক্রেটস নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। এসব কাজের জন্য লেবার প্রয়োজন হয় ৯ থেকে ১০ জন। কিন্তু টেকনোক্রেটস নামের প্রতিষ্ঠানটি সেখানে ৩২ জন লেবার কাজ করেন বলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে অতিরিক্ত মজুরি গ্রহণেরও অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে বার বার অলিউর রহমানের প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই লন্ড্রী ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে বার বার নবায়ন করার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ টেন্ডার নবায়নের জন্য ভাই ভাই লন্ড্রী ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসের মালিক অলিউর রহমান মাসে বড় অংকের টাকা মাসোয়ারা দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলামকে। তাই চুপিসারে তারা বিনা টেন্ডারে অলিউর রহসানের প্রতিষ্ঠানকে নবায়নের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আসতে পারে। যা চলছে ভালই চলছে। কোন অনিয়ম হচ্ছে না। আমাদের তদারকিরও কোন ঘাটতি নেই।
রেলওয়ের সঙ্গে এমন চুক্তির বিষয়ে জানেন না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তির বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি আপনার কাছে কোন ডকুমেন্টস তাকে আমাকে দেন। আমি বিষয়টি দেখব।
আজকের সারাদেশ/২১আগস্ট/টিএইচ/এসএম