দুপুর ২:৫১, রবিবার, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নালায় তলিয়ে যাওয়া সালেহ’র ছেলের সংবাদ সম্মেলন

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার সময় নগরীর মুরাদপুরে উন্মুক্ত নালায় পড়ে তলিয়ে যান সবজি ব্যবসায়ী ছালেহ আহমেদ। ঘটনার ২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তার সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার নগরীর মুরাদপুরের সেই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিহতের ছেলে ছাদেকউল্লাহ মহিম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন ঘটনার এক বছর পর উচ্চ আদালতে ৬০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করার পর আদালত  চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। কিন্তু এই দুই সংস্থা প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো জবাব দেয়নি।

ছাদেকউল্লাহ মহিম বলেন, ‘আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) গাফিলতির কারণে আমাদের জীবন থেকে চিরতরে ‘বাবা’ শব্দটা মুছে গেছে। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলের ওই খালে কোনো নিরাপত্তা দেয়াল থাকলে কিংবা জলাবদ্ধতা না হলে দুর্ঘটনার কোনো প্রশ্নেই আসে না। খালে ময়লা আবর্জনা না থাকলে হয়ত আমার বাবার লাশটা অন্তত ফিরে পেতাম। ঘটনার পর আপনারা দেখেছেন, চসিক কিংবা সিডিএ কেউ দায় নেয়নি। একটা আরেকটার উপর দোষ চাপিয়েছে। দুর্ঘটনা এড়ানোর ব্যবস্থা পর্যন্ত নেয়নি। আমার বাবার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন মর্মান্তিক ঘটনার এক মাসের মধ্যেই আগ্রাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া উন্মুক্ত নালায় পড়ে মারা গেছেন। সাদিয়ার মৃত্যুও তাদের দায়িত্বহীনতার ফল। ওদের অবহেলার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের মত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। ’

তিনি আরো বলেন, আমার বাবাই ছিলেন আমাদের পুরো পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। ওনিই আমাদের পরিবারের সকল ব্যয় নির্বাহ করতেন। কখনো আমাদের কষ্ট পেতে দেননি। অভাব বুঝতে দেননি। নিজে পরিশ্রম করলেও আমাদের রাজপুত্র-রাজকন্যার মত চালিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পেটে বাবা তলিয়ে যাওয়ার পর তারা বড় মুখ করে আমাকে চাকরীর আশ্বাস দেয়। আমি তখন একাদশ শ্রেণিতে পড়ি। এর আগে কোনোদিন আমাকে টানা ১০ মিনিট একসঙ্গে পরিশ্রম করতে হয়নি। শুধু পড়াশোনাই ছিল আমাদের একমাত্র কাজ। মেয়র সাহেব আমাকে চাকরি দিলেন পেট্রোল পাম্পের শ্রমিক হিসেবে। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, মেয়র সাহেব কিংবা সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তার একাদশ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে কোনদিন গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার চাকরীতে দিতেন? তাও দিনে ১২ ঘন্টা ডিউটি করতে হবে। ওই সময় তো আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মনযোগ দেওয়ার কথা, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। আমাকে কেন সিটি করপোরেশনের পাম্পে দিনে ১২ ঘন্টা দাড়িয়ে শ্রমিক হিসেবে গাড়িতে পেট্রোল পুরতে হবে? আমার বাবা তো এটা কোনোদিন সহ্য করতেন না৷ তারা আমার বাবাকে দুনিয়া থেকে গায়েব করে আমাকে শ্রমিক বানিয়েছে।

যেখানে কোনোদিন ১২ মিনিট একসঙ্গে কাজ করতে হয়নি, সেখানে টানা ১২ ঘন্টা কাজ করা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। তাছাড়া আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও ছিল। তাই বাধ্য হয়ে চাকরিটা ছাড়তে হয়েছে আমাকে। আমি মেয়র মহোদয়কে কয়েকবার অনুরোধ করেছি যেন চাকরীটা পরিবর্তন করে দেন। সিটি করপোরেশনের কোনো অফিসে পিয়ন হিসেবে দেওয়া যেত আমাকে। কিন্তু ওনি বললেন এটাই করতে হবে।

ওই চাকরি ছাড়ার পর কেউ আমাদের আর কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। ১ বছর পর আমরা উচ্চ আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য রিট করেছি৷ মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ তদন্ত করে চসিক ও সিডিএকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। সেটা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালত আমাদের ক্ষতিপূরণ  দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহের রুল জারি করেছিলেন, তারা কোনো জবাব দেয়নি।

এখনো বাবার মরদেহ না পাওয়ায় কবর জিয়ারতও করতে পারেননা জানিয়ে মহিম বলেন, ‘মানুষ মরনশীল, আমরা কেউ এই পৃথিবীতে চিরদিন থাকব না নিশ্চয়। একইভাবে আপনাদের অনেকের স্বজনও ইন্তেকাল করেছেন। সেই হিসেবে আমার বাবাও চিরদিন এই পৃথিবীতে থাকতেন না। আপনি চাইলেই আপনার স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে পারেন। কবরের পাশে দাড়িয়ে বাবার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে পারেন। কিন্তু ভাই আমার তো সেই সুযোগটাও নাই। আমারও তো খুব ইচ্ছে করে অন্তত বাবার কবরের পাশে দাড়িয়ে একটু জিয়ারত করি, বাবাকে দুটো কথা বলি। আমি কোথায় যাব ভাই? কোথায় গেলে বাবার কবরটা অন্তত পাবো? কখন, কোথায় গেলে বাবার কবরের পাশে দাড়িয়ে অন্তত দুই মিনিটের জন্য জিয়ারত করে মনকে বুঝ দিতে পারব?’

তার বাবা তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দোষীদের বিচার ও উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে মহিম বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই৷ আমার বিশ্বাস ওনি পিতৃহারা কোনো সন্তানের আবেদন ফেলবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি ও আমার ছোটবোন দুজনই শিক্ষার্থী। আমরা পড়াশোনা করতে চাই। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমরা দুই ভাই-বোন পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হব। আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে আপনার বাবা বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করেছেন, আমাদেরও আমাদের বাবার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ করে দিন। ১২ ঘন্টা শ্রমের কোনো চাকরি নয়, আমাদের পড়াশোনার সুযোগ দিন। যাদের কারণে আমারা বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আপনি তাদের বিচার করুন। তাদের অবহেলায় কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আপনি দয়া করে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনুন। দয়া করে তাদের সতর্ক করুন, আমার মত আর কোনো মাহিন যেন পিতৃহারা না হয়।’

আজকের সারাদেশ/২৪আগস্ট/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

সাড়ে ১৬ হাজার ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার করা হবে: আসিফ নজরুল

চবিতে স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার দায়িত্বে সাকিল-জিসান

কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে শহীদ তানভীর হত্যা মামলার আসামিরা

চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলের নেতৃত্বে ৩৫ মামলার আমামি

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’