বিকাল ৩:৫৫, রবিবার, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থির সবজির বাজার, ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনে

এম. মোরশেদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন কলেজে পড়ুয়া সিফাতুল ইসলাম। ব্যাচেলর মেসে থাকায় তার কাঁধে আজ বাজারের পালা। এক হাজার টাকায় কিনতে হবে মাছ-মুরগি ও সবজি। বাজারে ঢুকেই কয়েকটি দোকানে সবজির দর জিজ্ঞেস করেছেন। কত টাকায় কি নেবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না!

ঠিক কিছুক্ষণ পরে সিফাতের সঙ্গে কথা হয়। তিনি  বলেন, আজ মেসের পালা আমার ওপরে। তাই বাজার করতে এসেছি। এক হাজার টাকায় কি বাজার করব! দিন দিন সব সবজির দাম বাড়ছে। দুই কেজি সবজি নিতেই ১৬০ টাকা চলে গেল। রুই মাছ দেখলাম কেজি ৩৫০ করে একদাম। বাধ্য হয়ে দুই কেজি ওজনের একটি মাছ নিয়েছি ৭০০ টাকায়। বাকি ১৪০ টাকায় আর কি নেওয়া যায় সেটিই ভাবছি। দামে হার না মেনে উপাইও নেই।

এমনই অবস্থা শুধু কলেজ পড়ুয়া সিফাতের নয়। বাজার করতে আসা বেশিভাগ মধ্যবিত্তরাই যেন এই পরিস্থিতির স্বীকার।

চট্টগ্রামের সবজির বাজার দর যেন রাতে দিনেই উঠা-নামা করছে। সপ্তাহরের ব্যবধানে টমেটোর দাম ৪০ টাকা কমলেও কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে তিত করলা ও কাঁচা মরিচের দাম। অন্যদিকে লাগামহীন মুরগির বাজার। এক সপ্তাহে ৫ টাকা কমলে পরের সপ্তাহে ১০ টাকা বাড়ে। প্রতি হালি ডিম ৪ টাকা কমে ৫৬ টাকায় বিক্রি হলেও স্বস্তি নেই মাছে বাজারে।

এদিকে ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানির ওপরে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরের পরপরই বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে মানভেদে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। পাশাপাশি কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে।

সবজির বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা কমে টমেটো ১৪০, ২০ টাকা বেড়ে কাচামরিচ ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ২০ টাকা কমে শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি গাজর ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০, পটল ৬০, মিষ্টি কুমড়া ৫০, করলা ৭০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা ৫০, ঢেড়শ ৬০, লাউ ৫০ ও কচুর ছড়া ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  ১০ টাকা বেড়ে কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা,২০ টাকা বেড়ে পলট ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতি জোড়া লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।

আতুরারডিপো বাজারের সবজি কিনতে আসা জাহেদুল করিম বলেন, কি খাব ভাই! গত দুইদিন আগে মরিচ কিনেছি ১৫০ টাকা ধরে। আজকে নাকি একদাম ২০০ টাকা। সবজির ওপরে তো আরও আগুন। কম রাখতে বললে বলে, একদাম। নিলে নেন, না নিলে যান।

একই বাজারের সবজি বিক্রেতা মানিক বলেন, চট্টগ্রামের যেসব এলাকা থেকে সবজি আসতো বেশিরভাগ এলাকায় বন্যায় সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সেই সবজির যোগান দিতে হচ্ছে। ফলে সবজি দাম একটু বেশিই। আমরা নিজেরা-ও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কাঁচাবাজরের দরদাম হঠাৎ উঠা-নামা করে। কোন ব্যবসায়ী এটি বলতে পারবে না এটার দাম কমবে বা ওইটার বাড়বে।

এদিকে মুরগির বাজারে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০ টাকায়। গরীবের মাংসের যোগান দেওয়া এই ব্রয়লার মুরগি এর আগের সপ্তাহে ধরে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। তারও আগে দাম ঠেকেছিল ১৯০ টাকা পর্যন্ত।প্রতিকেজি সোনালী মুরগি ৩৩০, লেয়ার ৩৫০ ও দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগি বিক্রিতেরা বলছেন, মুরগির খাবারের দাম বাড়ার কারণে মুরগির দামও বেড়ে যায়৷ আবার দেখা যায় সরবরাহ কমে গেলেও দাম বেড়ে যায়। যখস বাজারে বেশি মুরগি আসবে তখন দাম কমে যায়।

অন্যদিকে মাসের শুরুতে উত্তাপ ছড়ানো ডিমের বাজর এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। শহরের বড় ডিমের আড়তগুলোতে দিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার ডিম বেচাকেনায় শুভংকরের ফাঁকির প্রমাণ পেয়ে জরিমানাও করেছে কয়েকবার। তাতেও যেন কমছে না ডিমের দাম। আজ প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, প্রতিডজন হাঁসের ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ঠেকেছিল ১৮০ টাকায়। গত সপ্তাহেও প্রতিডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়।

ডিম কিনতে আসা ইলিয়াস বলেন, ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করতে বলেছে সরকার। দোকানে এসে কখনো ১২টাকায় ডিম পেলাম না। সরকার নির্ধারণ ডিমের চেয়ে বেশকম থাকেই প্রতিবার।

সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন ডিমের দোকানে অভিযান চালানো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক নাসরিন খান বলেন, চসতি মাস শুরু থেকে দামের কারসাজির অভিযোগে নগরীর পাইকারি দোকানগুলোতে অভিযান করেছি। এসময় তারা ডিমের মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করাসহ অতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রমাণ পাই। জরিমানার পাশাপাশি সর্তকও করা হয় ব্যবসায়িদের৷ এমনও হয়েছে অনেকে অভিযানের খবর পেয়ে দোকানে তালা লাগিয়ে চলে গেছে। আমরা তালা ভেঙে জরিমানা করেছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই দামের কারসাজি করে থাকেন। আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযানে যাচ্ছি। এটি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়, পাবদা ৪৫০, রুপচাদা (বড়) ১ হাজার, রুপচাদা (ছোট) ৮০০, তেলাপিয়া ২৪০ ও পাঙ্গাস ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ কিনতে আসা রফিক নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়৷ তিনি বলেন, কোন মাছ খাব। পুকুরের মাছের দাম বেশি হওয়াও সাগরের মাছ কিনতাম। এখন সেখানেও দাম বেশি। আগে কখনো পাঙ্গাস কিনতাম না, এখন কম দামে শুধু পাঙ্গাস আছে তাও ১৬০-১৮০ টাকা কেজি।

ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানির ওপরে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপে পর থেকে খাতুনগঞ্জ পেঁয়াজের আমদানি কমে অর্থেকে নেমেছে। ৫৫ টাকার পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। অন্যদিকে নীরবে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

ক্রেতা মিজবাহ বলেন, পেঁয়াজের গত সপ্তাহে কিনলাম ৫৫ টাকায় আজ নাকি ৬৫। একটু ভাল মানের নিলে ৭০ টাকা চাচ্ছে। এক কেজি কিনেছি ৬৫ টাকায়। নিজের বাছাই করে নেওয়া যাবে না তাও। তারা কেমন দেয়। আমরা সাধারণ মানুষ এদের কাছে জিম্মি।

এবিষয়ে আতুরারডিপো বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মহসিন বলেন, ইন্ডিয়ার পেঁয়াজের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের খবরে বেপারিরা আগে যে পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে আমদানি করেছিল এখন তা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে। আমরা দোকানে খুচরা ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

আজকের সারাদেশ/২৫আগস্ট/এসএম

সর্বশেষ সংবাদ

সাড়ে ১৬ হাজার ‘গায়েবি মামলা’ প্রত্যাহার করা হবে: আসিফ নজরুল

চবিতে স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব লোহাগাড়া-সাতকানিয়ার দায়িত্বে সাকিল-জিসান

কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে শহীদ তানভীর হত্যা মামলার আসামিরা

চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলের নেতৃত্বে ৩৫ মামলার আমামি

সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের প্রথম দিনে আয় প্রায় ৫ লাখ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা ভাতা

বিএনপির ৩১ দফা কেবল দেশ ও দেশের মানুষের জন্য

কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকে ভাটা, ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

বোয়ালখালী পৌসভা নানা অনিয়মে গিলে খেয়েছে ‘সিন্ডিকেট’