আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
‘শুভ জন্মদিন রিমঝিম। সুন্দর হউক আগামী পথ চলা।। আমার মেয়ের জন্য আশীর্বাদ করবেন।’ শনিবার বিকেল ৬ টা ২৭ মিনিটে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে এভাবেই একমাত্র মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী রাজিব দাশগুপ্ত। একদিন পর (রোববার) শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল তার মেয়ে রিমঝিম দাশগুপ্তের। কিন্তু দুদিন আগে কলেজ থেকে প্রবেশপত্র নিয়ে ফেরার পথে রিকশা থেকে পড়ে যান তিনি, সেসময় অসাবধানতা বশত হারিয়ে যায় প্রবেশপত্র। মা-বাবার বকার ভয়ে বিষয়টি শুরুতে গোপন রাখেন রিমঝিম। কিন্তু পরীক্ষা শুরুর আগের রাতে হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেঁচে নেন তিনি।
নগরীর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন রিমঝিম। মা বাবা, ভাই ও দাদির সঙ্গে সদরঘাট এলাকায় বসবাস করতেন।
রিমঝিমের প্রতিবেশীরা জানান, সাধারণত বাসায় দাদির সঙ্গে ঘুমান রিমঝিম। ওইদিন খাওয়া দাওয়ার পর পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে পড়াশোনার কথা জানিয়ে দাদািকে ঘুমিয়ে যেতে বলেন। রাত তিনটার দিকে ঘুম ভেঙে রিমঝিমকে না পেয়ে তার বাবাকে জানান দাদি। এসময় বাসার ডাইনিং রুমের সিলিংয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তার মরদেহ।
এসময় ডাইনিং টেবিলে পাওয়া যায় রিমঝিমের হাতে লেখা একটি চিরকুট। চিরকুটে রিমঝিম লিখেছেন, ‘মা ও বাবা, তোমরা অনেক কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছো, কিন্তু আমি তোমাদের সন্মান রাখতে পারিনি, আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।’
চিরকুটে প্রবেশপথ হারানোর বিষয়েও লিখেন তিনি।
নিহত রিমিঝিমের বাবা রাজিব দাশগুপ্ত রাজু বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রবেশপথ হারিয়েছে বুঝতে পারিনি। কী থেকে কী হয়েছে সেটাও বুঝতে পারছি না। আমার মাথায় কাজ করছে না, আমি কিছুই বলতে পারি না।’
খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রাব্বানি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
নিজ এলাকায় মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে আলাদা সুনাম ছিল রিমিঝিমের। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। তার মৃত্যুর খবরে শোকাহত সহপাঠীরাও।
তবে প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলেই পরীক্ষা দিতে পারবে না- এই ধারণা সঠিক নয় বলে জানান চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন, ‘প্রবেশপত্র হারিয়ে যাওয়াটা খুব বড় কোনো সমস্যা না। এরকম প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে সাথে সাথে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এক মিনিটের মধ্যেই কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন প্রবেশপ্রত্র প্রিন্ট করে দিতে পারবে। ওয়েব লিংক থেকে তারা যতবার ইচ্ছে নিতে পারে।’
আজকের সারাদেশ/২৭আগস্ট/এএইচ