বিকাল ৪:৩৭, বৃহস্পতিবার, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসাদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে পটিয়ায় প্রধান শিক্ষিকার দন্ড!

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

চট্রগ্রামের পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধে সরকারী কর্মচারী বিধিমালায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিভাগীয় মামলা দায়েরর পর এবার তার বেতন বৃদ্ধি আগামী এক বছরের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম।

গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয়ের এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আদেশ সূত্রে জানা যায়, ফেরদৌস আরা বেগম প্রধান শিক্ষক, হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্ত অপরাধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) অসদাচরণ ও ৩ (ঘ) বিধি মতে “দুর্নীতি পরায়নচ্ এর অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত ১লা আগষ্ট তারিখে বিভাগীয় মামলা-১১/২০২৩ রুজুপূর্বক অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রেরণ করে জবাব প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

যেহেতু, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গত ৮ আগষ্ট তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করেন ও তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন বিধায় ২৭ আগষ্ট তার ব্যক্তিগত শুনানী গ্রহণ করা হয়।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দাখিলকৃত জবাব ব্যক্তিগত শুনানীতে প্রদত্ত বক্তব্য বিভাগীয় মামলার প্রাসঙ্গিক রেকর্ডপত্রাদি ও সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪ (২) (খ) উপবিধি অনুযায়ী ‘লঘুদন্ড’ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সেহেতু ফেরদৌস আরা বেগমকে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৪ এর (২) (খ) উপবিধি মোতাবেক ১ টি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১ (এক) বছরের জন্য স্থগিত করে ‘লঘুদণ্ড প্রদান করা হলো। উক্ত স্থগিতকৃত বেতন পরবর্তীতে তিনি বকেয়া হিসেবে প্রাপ্য হবেন না। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নামমাত্র বেতনে কোন প্রকার নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই পটিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা লাওয়ারখীল বেসরকারি বানেস্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ফেরদৌস আরা বেগম শিক্ষকতা শুরু করেন। এক সময় এই বিদ্যালয়ে ১০/১৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। তখন ৫০০/১০০০ টাকা বেতনে কেউ ১/২ বছরের বেশি এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতনা। একটানা ঐ স্কুলে থেকে যাওয়ায় কয়কবার পরীক্ষা দিয়ে কোন রকমে এইচএসসি পাস করা ফেরদৌস আরা বেগম হয়ে যান এই বিদ্যালয়ের পুরাতন শিক্ষক। সেসুবাধে কোন পরীক্ষা ছাড়াই তিনি বনেযান বানেস্বর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া সরকার ২০১৩ সালে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে যে অবস্থায় আছে সে সে অবস্থায় সরকারি করন করলে কপাল খুলে যায় ফেরদৌস আরা বেগমের। সরকারি হওয়ার পর তিনি রশিদাবাদস্থ এক আওয়ামী লীগ নেতার মাধ্যমে তদবির করে বদলি হয়ে চলে আসেন নিজ গ্রামের হিলচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হিলচিয়া স্কুলে যোগদানের পর থেকে তার বিরুদ্ধে একাডেমিক অদক্ষতা, আর্থিক অনিয়ম, অসদাচরণ সহ একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে পাঠদানে অক্ষম ফেরদৌস আরা বেগমের নিজের হাতের ৯ লাইনের একটি বাংলা লেখায় প্রায় ১০ টি বানান ভুল করেন। পটিয়ার এমপি ও সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিষয়টি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কে নির্দেশ দেন।তাছাড়া তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি ও পরীক্ষার ফি’র নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি হওয়ায় তার স্বামী নুরুল ইসলামের সাথে তিনি সামাজিক বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের সাথে নিজেও জড়িয়ে পড়েন। মাঠের মাঝখানে খুঁটি গেঁড়ে স্কুলের সম্পত্তি বেদখল করার কাজে তিনি তার স্বামীকে সহায়তা করেন। এই ঘটনায় তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমদ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ছাঁদ ঢালাই কাজের দিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা,সভাপতি সহ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সেদিনই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের একটি খাতায় বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন। স্বামীকে সভাপতি করে পছন্দমত কমিটি গঠনের জন্য তিনি অপতৎপরতা চালান।

প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিনকে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে গত ১ আগষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম এর দপ্তরে এই বিভাগীয় মামলা রুজু হয়।

গত ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে তাকে ব্যক্তিগত শুনানী করার সুযোগ দেয়া হয়।

পটিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দেবাশিস বিশ্বাস বলেন,আমরা তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পেয়েছি। আমাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক লঘুদন্ড প্রদান করেছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের পর বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলার শুনানি শেষে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপীল বিধিমালা অনুযায়ী তার ১টি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ১ বছরের জন্য স্থগিত করে লঘুদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। স্হগিতকৃত বেতন পরবর্তীতে তিনি বকেয়া হিসেবে প্রাপ্য হবেন না। এ ধরনের শাস্তি অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে।

আজকের সারাদেশ/১২ সেপ্টেম্বর

সর্বশেষ সংবাদ

কবিতা: স্বাধীনতা।

ভূমি, কার্গো দখল ও ঘর ভাংচুরের ঘটনায় কবিরহাট থানায় মামলা

চবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ‘মুক্ত সংলাপ’ প্রত্যাখান শিক্ষার্থীদের, ষড়যন্ত্র না করতে দিল হুঁশিয়ারি

১৫ বছর পর মাতৃভূমিতে যুবদল নেতা হাসান নূরী

চবি উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শামীম অথবা ড. আতিয়ারকে চান শিক্ষার্থীরা

ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার দায় নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন পলক

কোপা আমেরিকার সেরা একাদশে ৫ জনই আর্জেন্টিনার, ব্রাজিলের এক

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখলেন নিজেরই সন্তান

নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে চবি কর্তৃপক্ষ

১২ দিন পর স্বল্প পরিসরে ট্রেন সার্ভিস চালু