সকাল ১০:০৮, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানেলের সঙ্গে একইদিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরও উদ্বোধন চায় সিডিএ

হাবীব আরাফাত, চট্টগ্রাম

যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন করতে পারেন বলে ধারণা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উড়াল সড়কে এখনো কোনো র‌্যাম্প ছাড়াও মূল অবকাঠামোর ২০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সঙ্গে একই দিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে চায় সিডিএ।

আগামী ২৮ শে অক্টোবর দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম এই টানেল ইদ্বোধনের জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এখন বাকী আছে মাস দেড়েকের মত। তবে এরমধ্যেই অন্তত দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত অর্ধেক অংশ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে চায় সিডিএ। সে লক্ষ্যেই চলছে কাজ। বর্তমানে দিনরাত কাজ করছেন  হাজারের বেশি শ্রমিক।

সম্প্রতি দেশের বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর সবার চোখ এখন বন্দরনগরীতে। ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয়ে এখানেই নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উড়াল সড়ক। এখন পর্যন্ত মূল অবকাঠামোর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, শুরু হয়েছে উদ্বোধনের তোড়জোড়। মূলত বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পেতে টানেল উদ্বোধনের সঙ্গে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত নির্মিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ হলেও যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে চায় সিডিএ।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের সামারিসহ প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে এখনো অনুমোদন আসেনি। আমাদের ধারণা ২৮ শে অক্টোবর টানেলের সঙ্গে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন হবে। কারণ এর পরে তো আর সময় নেই।’

কাজের অগ্রগতি বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পতেঙ্গা থেকে কাস্টম পর্যন্ত আমাদের কার্পেটিং শেষ। অর্থাৎ এই অংশ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি তৈরি। এদিকেও তৈরি মোটামুটি, তবে আগ্রবাদ বারেক বিল্ডিং এলাকায় গার্ডারে একটা স্পন বাকী আছে, কর্ণফুলীর পর থেকে গার্ডারে স্ল্যাভ ঢালাই হয়ে আসতেছে। দেওয়ান হাটের আগ পর্যন্ত আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি তৈরি করে ফেলব আমরা।’

দিনরাত কাজ করছে হাজারের বেশি শ্রমিক:

আগামী এক মাসের মধ্যে অন্তত দেওয়ান হাট পর্যন্ত কাজ শেষ করতে বর্তমানে রাত-দিন মিলে ৩ শিফটে কাজ করছেন তিন হাজারের বেশি শ্রমিক। এই বিষয়ে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এক সেকেন্ডের জন্যও কাজ বন্ধ নেই। দৈনিক ৮ ঘন্টা করে তিন শিফটে ৩ হাজারের অধিক শ্রমিক বর্তমানে কাজ করছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে।

 চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তিতে নকশায় পরিবর্তন:

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির এই পুরো প্রকল্পের কাজ করা সম্পন্ন হচ্ছে ৪ টি ধাপে। ২০১৯ সালে কাজ শুরুর পর সহজেই প্রথম দুই ধাপে ভৌত কাজ সম্পন্ন করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তৃতীয় ধাপে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা জনিত কারণে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়।  শুরুতে নগরীর বৃহত্তম এই উড়ালসড়ক লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণের কথা ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে পরিবর্তিত নকশায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে প্রস্তুত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কাজের  চতুর্থ ধাপে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় নগর ট্রাফিক পুলিশের আপত্তিতে আটকে ছিল কাজ। ২০২০ সালে এই দুই সড়ক চালুর পর ফের শুরু হয় কাজ।

 তিন দফায় বেড়েছে সময়, ব্যয় বেড়েছে এক তৃতীয়াংশের বেশি:

বন্দরনগরীর যানজট কমানো ও নগরীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজের লক্ষে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে  এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের এই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতায় ব্যয় বৃদ্ধি করে তা ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। যা মূল ব্যায়ের ৩৪ শতাংশেরও কিছু বেশি।

 একনেকে অনুমোদনের পর পরবর্তী তিন বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্নের কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে এই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

 ্যাম্প নির্মাণে বিলম্ব: সুফল নিয়ে সংশয়:

সাধারণত বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে শহরের কেন্দ্রে আসতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে পতেঙ্গা বা বিমানবন্দর এলাকায় যাওয়ার পথে অনেকটা অবধারিতভাবেই জ্যামে পড়তে হয় একাধিকবার। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেওয়া হলে যানবাহনের চাপ দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে নগরীর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে কয়েকঘন্টার এই পথ ৩০ মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের আগে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই উড়ালসড়ক দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তৈরি হয়নি কোনো র‌্যাম্প।

প্রকল্পে নির্ধারিত ১৫ টি র‌্যাম্পের বিষয়ে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পুরো এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১৫ টি র‌্যাম্প রয়েছে, তবে এখনো কোনো র‌্যাম্প তৈরি হয়নি। বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত, এরমধ্যে ফ্লাইওভারের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে র‌্যাম্পের কিছু কাজ বাকী থাকতে পারে।’

এখনো র‌্যাম্প নির্মিত না হওয়ায় দেওয়ানহাট থেকে সরাসরি পতেঙ্গা বা পতেঙ্গা থেকে সরাসরি দেওয়ান হাট পর্যন্ত চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এক্সপ্রেসওয়ে। এতে র‌্যাম্প নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগ্রাবাদের মত শহরের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করতে পারবেন না এই উড়ালসড়ক। এমনকি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এলাকায়ও যানবাহন উঠানামা করতে পারবে না  র‌্যাম্পের কারণে। আর তাই এই উড়ালসড়ক খুলে দেওয়া হলেও তার সুফল নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

 এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আদ্যোপান্ত:

নির্মাণাধীন দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ২ কিলোমিটারের এই উড়ালসড়কের প্রস্থ ১৬ দশমিক ৫ মিটার বা ৫৪ ফুট। পুরো ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৯০ টি পিলারের উপর। এসব পিলারের উপর সম্পূর্ণ ফ্লাইওভারের কাঠামো দাড় করাতে বসানো হচ্ছে ৪০০ টি গার্ডার। তাছাড়া নিচ থেকে বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন উঠানামার জন্য রাখা হয়েছে ১৫ টি র‌্যাম্প।

তবে এখনো মূল কাঠামোর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবগুলো পিলার তৈরি হলেও বাকী আছে গার্ডার ও স্ল্যাভ ঢালাইয়ের কাজ। প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পিলার সবগুলো বসানো শেষ, তবে গার্ডারের কাজ চলছে এখনো।’

মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণের প্রস্তাব:

নির্মাণাধীন এই উড়ালসড়কটি চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণের প্রস্তাব করেছে সিডিএ। চলতি বছরের ২৪ আগস্ট সংস্থাটির ৪৫৮ তম বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিতে ‘সিডিএ মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার’ নামে নামকরণের প্রস্তাব করা হয়।

সিডিএর বোর্ড সভায় গ্রহণের পর অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনাটি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি  বলেন, ‘সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো অনুমোদনের জন্য। সেখান থেকে সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। তারপর চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম ‘সিডিএ মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার’ নামে নামকরণ করা হবে।

আজকের সারাদেশ/১২সেপ্টেম্বর/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি