সকাল ৬:৩১, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর কাছে দ্রুতই ফিরলেন হেলাল, তবে কফিনবন্দী হয়ে

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

হেলাল উদ্দিনের নিরব-নিথর দেহটা গোসল শেষে শোয়ানো হয়েছে খাটিয়ায়। একটু পরেই সাদা কাফনে মোড়ানো দেহটা নিয়ে যাওয়া হবে কবরস্তানের উদ্দেশে। স্বজনরা শেষবারের মতো তাই এক পলক দেখে নিচ্ছিলেন তাঁকে। এর মধ্যেই বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ভিড় ঠেলে স্বামীর খাটিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে প্রশ্ন করলেন, ‘আমার হাতে এখনো মেহেদির রং রয়ে গেল, তার আগেই তুমি মুছে গেলে জীবন থেকে?’ কোনো উত্তর এল না! কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে যাওয়া জান্নাতুলের চোখে ফের ফিলে এল জলের ধারা। সেই চোখ মুছতে মুছতে দেখলেন স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন শেষবারের মতো, স্বজনদের কাঁধে চড়ে।

এভাবেই হেলালের শেষ বিদায়ের মুহূর্তের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তাঁর স্বজনরা। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শেখেরখীলের গুইল্যাখালী এলাকার বাসিন্দা হেলাল ছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী। ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মালয়েশিয়ার বেন্টং এলাকায় একটি নালায় কাজ করার সময় পাহাড়ধসে আহত হন হেলাল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। দুই ঘণ্টা পর ওই দিন রাত সাড়ে নয়টার চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় হেলালের।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় হেলালের মরদেহ। পরে তাঁর ভগ্নিপতি মো. কামরুল ইসলাম মরদেহ গ্রহণ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে নতুন করে শোকের ছায়া নেমে আসে। হেলালের জন্য বাড়ির মানুষ তো বটেই, চোখ ভিজে যায় গ্রামের মানুষদেরও। এরপর বিকেলে গুইল্যাখালী স্থানীয় জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে চিরদিনের জন্য কবরে শুইয়ে দেওয়া হয় হেলালকে।

গত ফেব্রুয়ারিতে হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাতুলের। বিয়ের পর স্বামী ফিরে যান তাঁর কর্মস্থল-মালয়েশিয়ায়। স্ত্রী দূরে থাকলেও সেটি বুঝতে দিতেন না হেলাল। প্রতিদিন অবসর মিললেই ফোন দিতেন স্ত্রীকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো তাঁদের। প্রতিদিনই স্ত্রীকে বলতেন, ‘দোয়া কর, যাতে দ্রুতই তোমার কাছে ফিরতে পারি আবারও।’ আর প্রতিবারই জান্নাতুল বলতেন অবশ্যই দোয়া করি।  হেলাল দ্রুতই ফিরলেন বটে স্ত্রীর কাছে, তবে হাসিমুখে হেঁটে নয়,কফিনবন্দী লাশ হয়ে। জান্নাতুলের সেই দোয়া এত নির্মমভাবে সত্যি হয়ে যাবে কে জানত!

স্বামীর মরদেহ গ্রামে ফেরার আগ থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জান্নাতুল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বেশ কয়েকবার মূর্ছা যান। আর জ্ঞান ফিরতেই খোঁজা শুরু করতেন স্বামীকে, বলতে থাকেন-‘আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচব। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল।’

হেলালের ভগ্নিপতি কামরুল ইসলাম তাই বলেন, ‘হেলালকে হারানোর পর আমাদের সব দুশ্চিন্তা এখন জান্নাতুলকে ঘিরে। কারণ তিনি কোনোভাবেই স্বামী নেই সেটি মানতে পারছেন না। এখনো ভালোমতো তাঁর সংসার করাই হয়নি, তাঁর আগেই কিনা চলে গেলেন হেলাল। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছে।’

হেলালের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১ বছর আগে বহু কষ্টে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যান হেলাল। প্রথম দুই বছর কোনো কাজই পাননি। এই সময়ে পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগও ছিল না। এক পর্যায়ে ছেলে শোকে মারা যান ছৈয়দুল হক। হারান মাকেও। এরমধ্যে কাজ পেলে ধীরে ধীরে সুখ ফিরে আসতে শুরু করে হেলালের পরিবারে। চার বোনকে একে একে বিয়েও দেন তিনি। ভাইকে পাঠান ওমানে। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে বিয়ে করেন জান্নাতুলকে। ৪ মাসের ছুটি শেষে গত ৭ জুন ফিরে যান মালয়েশিয়ায়। এর তিন মাসের মাথায় মৃত্যু এসে নিয়ে গেল তাঁকে।

হেলাল মারা যাওয়ায় পুরো পরিবারটা আবারও অসহায় হয়ে গেল। সেটিই বলছিলেন হেলালের মামাতো বোন জয়নাব বেগম। অস্ফুট স্বরে এই নারী বলছিলেন, ‘হেলালের কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পরিবারটি। ক্লান্তিহীন কষ্ট করে, ঘামে ভিজে ভাই-বোনদের স্বস্তি দিয়েছিলেন হেলাল। এখন তাঁর মৃত্যুতে আবারও অসহায় হয়ে গেল। আসলে সুখ সইল না আমার ভাইকে। না হলে সুখ যখন ফিরল, তখনই কিনা চলে গেল।’

আজকের সারাদেশ/১৪সেপ্টেম্বর/টিএইচ/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি