আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা সময়ের দাবী বলে মত প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এর মুঠোফোনে ফোন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশৃংখলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সুজন।
এসময় সুজন বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ’৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হাত ধরেই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ছাত্রলীগের সে গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছে কতিপয় ছাত্রনেতারা। কারণে অকারণে তুচ্ছ কারণে কয়দিন পর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে তারা। বছরের পর বছর ধরে পড়ালেখার নামে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে ক্যাম্পাসকে তাদের স্বার্থ হাসিলের ঠিকানা হিসেবে পরিণত করেছে। তাদের এহেন আচরণে দল ও সরকার চরমভাবে বিব্রত। তাদের এসব সংঘর্ষের সাথে সাধারন ছাত্রদের কোন সম্পর্ক নেই।
‘মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই তাদের এসব সংঘাত ও সংঘর্ষ বলে মনে করেন চবি’র সাবেক এই শিক্ষার্থী। এর ফলে শিক্ষার সুষ্টু পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সেশন জটে পড়ছে। এসব ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। নচেৎ ছাত্র না হয়েও বছরের পর বছর কিভাবে ক্যাম্পাসে তারা আধিপত্য বিস্তার করছে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। কিছু সংখ্যক ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী চক্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য তারা সর্বদা ক্যাম্পাস এবং সংগঠনকে ব্যবহার করছে।,
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকান্ডের সাথে সংগঠনের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক না থাকলেও সংগঠনকে কলুষিত করছে তারা। তাদের এহেন কর্মকান্ডে সাধারন শিক্ষার্থীরা সর্বদা আতংকের মধ্যে থাকেন। অভিভাবকগণ সন্তানদের জন্য উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় থাকেন সারাক্ষণ। অথচ এমন হওয়ার তো কথা ছিল না? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিক্ষাঙ্গনে সুষ্টু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে সবসময় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ অতীতের যে কোন সরকারের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসন, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে শিক্ষার্থীদের সমন্বয় ঘটানো, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ যখন যা প্রয়োজন তা-ই করছে বর্তমান সরকার। কিন্তু সরকারের এতোসব গ্রহণযোগ্য কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এসব নামসর্বস্ব ছাত্রনেতারা। তাই এদের লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। সুজন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সকল কর্মকান্ড স্থগিত রাখার আহবান জানান।
পাশাপাশি এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিও আহবান জানান তিনি।
সুজন আরো বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় অত্যাচারী সরকারের খড়গের নীচে থেকে তাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন স্বৈরাচারী সরকারের আমলে ছাত্রলীগের অগনিত নেতা-কর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, জীবন দিয়েছে কিন্তু কোনদিনও কোন প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে আপোষ করেনি বলে যোগ করেন খোরশেদ আলম সুজন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা সুজনের সাথে কথা বলেন। তিনি সুজনের উত্থাপিত বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করেন।
সাদ্দাম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে লালন পালন করতে হবে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মেধা ও মননের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সেভাবে তৈরী হতে হবে। এর বাহিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসগুলোতে একসময়ের অস্ত্রের ঝনঝনানি, টেন্ডারবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সদা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। এখানে পড়ালেখার পরিবেশ বিনষ্ট করা সুযোগ কারো নেই। যেখানেই শিক্ষা বহির্ভূত কর্মকান্ড কিংবা সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সেই সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে এখানে কেউ কোন অপরাধ করে পার পাবে না। যারাই এসব অপকর্মের সাথে যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
আজকের সারাদেশ/এসএম