আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। এ উপলক্ষে বন্দরনগরীতে প্রতি বছরের মতো এবারও জশনে জুলুসের আয়োজন করা হয়েছে। এটি জুলুসের ৫১তম আয়োজন। এবারের জুলুসে অর্ধ কোটি মানুষের সমাগমের আশা করছেন আয়োজকরা। ইতোমধ্যে জুলুসের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রাত পেরোলেই জুলুসের নগরীতে পরিনত হবে চট্টগ্রাম।
এদিকে প্রতিবারের মতো এবারও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দৃষ্টিনন্দন তোরণ, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজকে জুলুসের পতাকা, বর্ণিল আলোকসজ্জা, ব্যানার, ফেস্টুনে ভাবগম্ভীর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আনজুমান ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে এ জুলুস শুরু হবে। ৩৫তম বারের মতো জুলুসের নেতৃত্ব দিতে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)।
সঙ্গে এসেছেন সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) ও শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (মজিআ)।
আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, জুলুস শুরুর পর বিবির হাট থেকে মুরাদপুর হয়ে মির্জারপুল, কাতালগঞ্জ হয়ে অলিখাঁ মসজিদ চকবাজার, কেয়ারি মোড়, প্যারেড ময়দানের পশ্চিম পাশ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি (ডানে মোড়), খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়), শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোড হয়ে আসকার দিঘী, কাজীর দেউরী (বামে মোড়), আলমাস (বামে মোড়), ওয়াসা (ডানে মোড়), জিইসি, দুই নম্বর গেইট হয়ে পুনরায় মুরাদপুর (ডানে মোড়) গিয়ে বিবিরহাট জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে দুপুর ১২টায় মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই ময়দানে জোহরের নামাজ এবং নামাজ শেষে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বুধবার রাতে সরেজমিন দেখা গেছে, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, আলমগীর খানকাহ, বিবিরহাট, মুরাদপুর, জামালখান, কাজীর দেউড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জুলুসের তোরণ দেওয়া হয়েছে। জুলুসের পতাকায় ছেয়ে গেছে পুরো নগর। অনেক গাড়িতেও জুলুসের পতাকা শোভা পাচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় পুরো নগরে জুলুসের আবহ তৈরি হয়েছে। জুলুসের মাঠকে ঘিরে রেললাইন ও আশপাশের এলাকায় বসেছে টুপি, আতর, ইসলামিক বই, পাঞ্জাবি, পাজামা, তসবিহ, জুতো, স্যান্ডেল, মুখরোচক খাবার, ফলের দোকান।
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) চট্টগ্রামে জুলুসের নেতৃত্ব দেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। তখন থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)। এটি তাঁর নেতৃত্বে ৩৫তম জুলুস। এই জুলুস এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। মানুষ চায় জুলুস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পাবে। এটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান পেলে চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আনজুমানের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশসহ হুজুর কেবলার আশেকদের ব্যবস্থাপনায় ভক্তরা জুলুসে অংশ নেবেন। তবে জেলা পর্যায়ের গাউসিয়া কমিটির শাখাগুলোকে নিজ নিজ জেলায় জুলুসের আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাইরে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক জুলুসে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। এবার জুলুসে আসা গাড়িতে উচ্চৈঃস্বরে সাউন্ডবক্স, মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা তবররক হিসেবে জুলুসের মেহমানদের খাবার বিতরণ করেন তাদের খাবার ছুড়ে মারতে নিষেধ করা হচ্ছে। জুলুসের আদব, শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স (এএসএফ)। এ ফোর্সের প্রধান সাদেক হোসেন জানান, এএসএফের পোশাক পরা ৩০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। যথারীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সাদা পোশাকেও থাকবেন পুলিশ সদস্যরা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এনএম নাসিরুদ্দিন জানান, জুলুসের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জশনে জুলুস অভিমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
ডাইভারশন পয়েন্ট:
জশনে জুলুস চলাকালে নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, মেডিক্যাল থেকে অলি খাঁ রোডের মুখ, তেলিপট্টি মোড়, চকবাজার থানা রোডের মুখ, সিজিএস স্কুল মোড়, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারি মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগি পাহাড় মোড়, সার্সন রোডের মুখ, নেভাল এভিনিউ, স্টেডিয়াম গোল চত্বর, আলমাস সিনেমা মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, এসএইচ খান ফিলিং স্টেশন (ওয়াসা), জিইসি মোড়, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন দেওয়া হবে।
পার্কিং:
জশনে জুলুসে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন মুসল্লিদের নামিয়ে দিয়ে পার্কিং পয়েন্টগুলোর মধ্যে স্ব-স্ব সুবিধাজনক স্থানে পার্কিং করবে। ফিরিঙ্গি বাজার বালুর মাঠ, সিআরবি সাত রাস্তার মাথা, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, কদমতলী-শুভপুর বাস টার্মিনাল, অক্সিজেন মোড়, বায়েজিদ লিংক রোড, আমবাগান শহীদ শাহজাহান মাঠ, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, নূরনগর হাউজিং মাঠ, এক কিলোমিটার এবং অলংকার মোড় পার্কিং স্থান হিসেবে ব্যবহার করবে। পার্কিংয়ের বিষয়ে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন কমিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। জুলুসের রুটে কোনো যানবাহন পার্কিং করে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না।