আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আজ ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) জশনে জুলুস। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর, নারায়ে রিসালত ইয়া রাসুলাল্লাহ, হামদ, নাত, দরুদে মুখরিত হচ্ছে জুলুস ও আশপাশের এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ৯টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে এ জুলুস শুরু হয়।
আওলাদে রাসুল, গাউসে জামান হজরতুলহাজ আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ) নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৫১তম জুলুসে।
সঙ্গে রয়েছেন সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ) ও শাহজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (মজিআ)।
বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জাপুল, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলিখাঁ মসজিদ, প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, খাস্তগীর স্কুল, ডা. এমএ হাশেম চত্বর (জামালখান), আসকার দীঘির উত্তর পাড়, কাজীর দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি, ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর হয়ে পুনরায় মাদ্রাসা মাঠে আসবে জুলুস।
জুলুসে অংশ নিতে ভোর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে নবীপ্রেমী মানুষ জড়ো হতে থাকেন ষোলশহরের জামেয়া মাদ্রাসা মাঠ ও আশপাশের এলাকায়। জুলুসের রোডম্যাপের মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করেন স্বেচ্ছাসেবক ও হুজুর কেবলার ভক্তরা। জুলুসকে ঘিরে মুরাদপুর, বিবিরহাট, মাদ্রাসা এলাকায় শত শত টুপি, মাস্ক, আতর, সুরমা, তসবিহ, পাঞ্জাবি, ইসলামি বই, খাবার দোকান বসেছে।
গাউসিয়া কমিটি, আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন তোরণ, সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজক সাজিয়েছে। জুলুসের মেহমানদের চকলেট, খেজুর, জিলাপি, জুস বিতরণ করছেন অনেক ভক্ত। নারী, শিশুরা বিভিন্ন ভবনের ছাদ, জানালা দিয়ে স্বাগত জানান জুলুসকে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবীরা বিতরণ করছেন শরবত। পুরো এলাকায় বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন।
জুলুসে অংশ নেওয়া রাকিব মোল্লা নামে একজন বলেন, নোয়াখালী থেকে জুলুসের অংশ নিতে এসেছি। আমি ১২ বছর ধরে জামেয়া জুলুসে আসছি। আউলাদে রসূলকে একটিবার দেখলে মনটা শান্তি লাগে। আজকের দিনই বড় ঈদ। ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)।
হুজুরের জন্য বিশেষভাবে সাজানো গাড়িতে আছেন আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন, সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শামসুদ্দিন, পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (র.) চট্টগ্রামে জুলুসের নেতৃত্ব দেন ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি জুলুসে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি আর বাংলাদেশে আসেননি। তখন থেকে জুলুসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হুজুর কেবলা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মজিআ)। এটি তাঁর নেতৃত্বে ৩৫তম জুলুস। এই জুলুস এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। মানুষ চায় জুলুস বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান পাবে। এটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান পেলে চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে।
গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, চট্টগ্রাম ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আনজুমানের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশসহ হুজুর কেবলার আশেকদের ব্যবস্থাপনায় ভক্তরা জুলুসে অংশ নিচ্ছেন। তবে জেলা পর্যায়ের গাউসিয়া কমিটির শাখাগুলোকে নিজ নিজ জেলায় জুলুসের আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাইরে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক জুলুসে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এবার জুলুসে আসা গাড়িতে উচ্চৈঃস্বরে সাউন্ডবক্স, মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যারা তবররক হিসেবে জুলুসের মেহমানদের খাবার বিতরণ করেন তাদের খাবার ছুড়ে মারতে নিষেধ করা হচ্ছে। জুলুসের আদব, শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সবার সহযোগিতা চাই।
আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) প্রধান সাদেক হোসেন জানান, এএসএফের পোশাক পরা তিনশ’ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। যথারীতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। সাদা পোশাকেও থাকবেন পুলিশ সদস্যরা।
ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনা :
জশনে জুলুস উপলক্ষে সড়কে যানচলাচলে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নগরের বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, মেডিকেল হতে অলিখাঁ মসজিদের মুখ, তেলিপট্টি মোড়, চকবাজার থানা রোডের মুখ, সিজিএস স্কুল মোড়, প্যারেড কর্নার, গণি বেকারী মোড়, জামালখান মোড়, চেরাগী পাহাড় মোড়, সার্সন রোডের মুখ, নেভাল এভিনিউ, স্টেডিয়াম গোল চত্বর, আলমাস সিনেমা মোড়, চট্টেশ্বরী মোড়, এসএইচ খান ফিলিং স্টেশন (ওয়াসা), জিইসি মোড়, ষোলশহর ২নং গেইট, মুরাদপুর রোডের মুখে রোড ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এনএম নাসিরুদ্দিন জানান, জুলুস উপলক্ষে আজকে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জশনে জুলুস অভিমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আজকের সারাদেশ/একে