আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মো. রাসেল নামের এক জাহাজ কাটার শ্রমিককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বাবা মো. ইউনুস মিয়া। রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা একটি জাহাজ কাটা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তা।
আদালত বাদীর জবানবন্দী গ্রহণের পর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলা হয়ে থাকলে সেটির প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, সাউদার্ন সালভেজ ও এমভি হানিমধুর স্বত্তাধিকারী আসাদুজ্জামান, সাউদার্ন সালভেজের ব্যবস্থাপক মুছাদ্দেক মিয়া, ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ও এনামুল, সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ এবং থানার সেকেন্ড অফিসার মুকিব হাসান।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট সকালে সীতাকুন্ডের মাদামবিবির হাট নেভী গেটের দিদারের কলোনির বাসা থেকে মো. রাসেল পরিত্যাক্ত জাহাজ কাটার কাজে যান। ওই কাজের দায়িত্ব নেয়া ফারুখ, হেলপার মহিউদ্দীন ও এনামুল নামের তিন ব্যক্তি রাসেলকে এই কাজে নিয়ে যান। পরদিন রাত পর্যন্ত রাসেল ফিরে না আসলে পরিবারের সদস্যরা তাঁর খোঁজে নামেন। রাসেলের বাবা ইউনুস মিয়া জানতে পারেন মামলার প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান জাহাজের লোহা কাটার কাজ নিয়ে তা বিভিন্ন কাটারম্যান শ্রমিক দিয়ে বাস্তবায়ন করতেন। তাঁরই মালিকানাধীন পুরাতন স্ক্রাপ জাহাজে রাসেল কাটারম্যান হিসেবে কাজে গিয়েছিলেন। আর দুই নম্বর আসামি মুছাদ্দেক ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে ইউনুস মিয়া আসাদুজ্জামান ও মুছাদ্দেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, তাদের স্পিড বোট নষ্ট থাকায় শ্রমিকদের পানিতে নেমে সাঁতার কেটে যে ফেরীতে খাবারের ব্যবস্থা আছে ঐ জাহাজে যেতে বললে সবাই সেখানে গেলেও রাসেল যাননি। এ নিয়ে রাসেলের সঙ্গে মুছাদ্দেক ও অন্য আসামি ফারুক আহমেদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে রাসেলের সহকারী মহিউদ্দিনকেও জোর করে সাঁতরিয়ে ওই ফেরিতে পাঠানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই হারিয়ে যান রাসেল।
এজাহারে বলা হয়, মহিউদ্দিন যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ওই জাহাজে থাকা তিন শ্রমিক রনি, শাহজাহান ও শীপন চিৎকার শুরু করে জানান, রাসেল পানিতে পড়ে গেছে। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাসেলকে পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ইউনুস মিয়া অভিযোগ করেন, রাসেলকে খুঁজে পাওয়া না গেলে তাঁর সহকারী মহিউদ্দিনকে ঘটনাস্থল সরিয়ে প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে যান মোছাদ্দেক। দুইদিন তাঁকে সেখান থেকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে রাসেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে ২৭ আগস্ট রাত ১২টায় সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যান ইউনুস মিয়া। কিন্তু থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার রাত ৪টা পর্যন্ত
বসিয়ে রেখেও অভিযোগ নেননি বলে জানান ইউনুস। পরদিন রাত ১০টায় পুনরায় থানায় গেলেও জিডি না নিয়ে উল্টো সেকেন্ড অফিসার মুকিব হাসান হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ইউনুস মিয়া। ইউনুস মিয়া বলেন, ‘প্রথমদিন রাতভর বসিয়ে রেখে অভিযোগ না নেওয়ায় পরদিন সকালে আমি মৌখিকভাবে বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে জানাই। এরপর রাতে অভিযোগ করতে গেলে সেকেন্ড অফিসার মুকিব হাসান হুমকি দিয়ে অশালীন গালাগাল দিয়ে বলে, ‘ডিআইজি আমার কি করবে? আমি যে রিপোর্ট দেব ওটাই হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। আর ওসি মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এসব নিয়ে মামলা করিওনা, আমাদের সমস্যা হবে। মালিককে ডেকে কিছু টাকা নিয়ে দেব। পরে ১ নম্বর আসামি হুমকি দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলে, লাশ পাইলে আরও টাকা দেবেন।’
এজাহারে লাশ উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে আরও বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় বাড়বকুন্ড ভোলাইপাড়া বেড়িবাধ এলাকায় স্থানীয় লোকজন একটি মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ইউনুস ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি নিজের ছেলে রাসেলের বলে শনাক্ত করেন। কিন্তু ওসি বাদীকে ছেলের লাশ না দিয়ে জানান, ‘ডিএনএ টেষ্ট ছাড়া লাশ দেওয়া যাবে না।” বাদীকে তাঁর সন্তানের লাশ না দিয়ে পরবর্তীতে আনজুমান মফিজুল ইসলামকে দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেন ওসি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘যেহেতু লাশটি সমুদ্র থেকে উদ্ধার হয়েছে সেটি বুঝিয়ে দেয়া না দেয়ার দায়িত্ব আমার না, নৌ থানার। তবে নৌ থানার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাদী একেকবার একেকটি লাশ নিজের ছেলের বলে দাবি করেছেন। সেজন্য ডিএনএ টেস্টের পরামর্শ দিই আমি। আদালতের আদেশের বিষয়টি এখনো আমার কাছে পৌঁছেনি। তবে শুনেছি এই ঘটনায় কি কি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি সেটি জানাতে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশ পাওয়ার পর সে অনুযায়ী আমি ব্যবস্থা নেব।’
আজকের সারাদেশ/০১অক্টোবর/টিএইচ/এএইচ