আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
শিক্ষাদান বা পাঠদানকে নিছক চাকরি হিসেবে গণ্য না করতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি বলেছেন, শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ। পৃথিবীর সব দেশের সব সমাজের অন্য সব বড় বড় ব্যক্তিত্ব শিক্ষকের হাতেই তৈরি হয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি রোববার বিকেলে নেত্রকোণা জেলা শহরের সাতপাই এলাকার আধুনিক স্টেডিয়ামে তাকে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে মেধা, সততা, জ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মকে ভবিষ্যতে সুনাগরিক হিসেবে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। এই কাজ আমরা যদি সফলভাবে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সঠিক দিক-নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হবে।’
পরিবারকে পৃথিবীর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একজন কিশোর-কিশোরী তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করে তার পরিবার থেকে। পরিবার হলো পৃথিবীর সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। সেজন্য মা-বাবা ও অভিভাবকদের আহ্বান জানাই, তারা যেন তরুণদের সুষ্ঠু ও সুন্দর মননের দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের দিকে লক্ষ্য রাখেন। যেন তাদের সন্তানরা বৈষম্যহীন সমাজ ও ধর্মের ভেদাভেদহীন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চায় অভ্যস্ত হন। সেই শিক্ষা মা-বাবাকে নিজ পরিবারে শুরু করতে হবে।’
ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘পরিবারের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। বিনয়ের সঙ্গে সব পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন শিক্ষাদান বা পাঠদানকে নিছক চাকরি হিসেবে গণ্য না করেন। শিক্ষকরা সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ। পৃথিবীর সব দেশের সব সমাজের অন্য সব বড় বড় ব্যক্তিত্ব—সে প্রধান বিচারপতি হোন, রাষ্ট্রপতি হোন—একজন শিক্ষকের হাতেই তৈরি হয়েছেন। শিক্ষকদের হাতেই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সমর্পিত। তরুণরা শিক্ষকদের নিষ্ঠা ও আদর্শের স্পর্শে এসে এদেশের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’
তরুণদের বিদ্যাচর্চায় আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তরুণরা যেন তথ্যপ্রযুক্তির আশীর্বাদ নেয়, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে যেন না পড়ে। এক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষকদের অবশ্যই অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে সচেতনভাবে সততা, স্বভাবসুলভ উদারতা, পরম সহিষ্ণুতা, পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ইত্যাদি কোমল মানবিক গুণসমূহের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। তাতেই কেবল আমাদের পড়াশোনা বা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন সার্থক হবে। এই গুণের চর্চা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’
তিনি আইন-মামলার বিষয়ে বলেন, ‘আইনের অনেক ডালপালা। যে ডালপালার কারণে একটি ছোট্ট মামলা থেকে অনেক মামলার সৃষ্টি হয় এবং অনেক অনেক মামলার জন্ম হয় নতুন করে।’
দেশের আইনের কিছু ত্রুটি রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই আইনের ত্রুটিগুলি সারিয়ে যুগোপযোগী আইন করার জন্য সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের কাছে বলবো, আইনকে যুগোপযোগী করার জন্য উদ্যোগ নেন। ল কমিশন যে রিপোর্ট দেয়, যে সাজেশন দেয় সেগুলি যদি সরকার বাস্তবায়ন করে, তাহলে এদেশের মানুষের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।’
নেত্রকোণা পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান লিটনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী, জাকিয়া পারভীন মনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) একেএম ফজলুল হক, নেত্রকোণার সিনিয়র জজ শাহজাহান কবীর, সিনিয়র জজ ইফতেখার বিন আজিজ, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম কবীর, জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ, পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, জেলা আদালতের জিপি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।
আজকের সারাদেশ/০১অক্টোবর/এএইচ