সকাল ৯:২১, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদভীর ‘চালে কাত’ মোতালেব!

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:

পাশাপাশি তিনটি চেয়ার। সেই তিন চেয়ারে বসে আছেন তিন প্রার্থী। একেবারে গা ছোঁয়া দূরত্ব। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও কথা নেই। উল্টো চলছে ‘বাকযুদ্ধ’। এই ‘যুদ্ধ’এক প্রার্থীর হয়ে অন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের খুঁত বের করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোট বেধেঁও দুজন হারাতে পারলেন না একজনকে!

এত কাছে তবুও কত দূরের এই ‘গল্পটি’ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময়কার। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে সেখানে চলতে থাকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তিতর্ক। এই তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান।

২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। সেজন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে টানা দুটি নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এখনও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ‘আস্থা’ অর্জন করতে পারেননি তিনি। এবার তাই নদভীকে ঠেকাতে একাট্টা হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। এরপরেও নদভীর ওপরেই আস্থা রাখে আওয়ামী লীগ। তবে এ আসনে এম এ মোতালেব ও ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

পৃথকভাবে প্রার্থী হলেও মোতালেব এবং মিনহাজুর একসঙ্গেই নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। তবে নদভীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোতালেবকেইে এগিয়ে রাখছিলেন সবাই। মাঠেও এর আভাষ পাওয়া যাচ্ছিল। গত কয়েকদিনে নদভীর সমর্থকদের হাতে মোতালেবের সমর্থকেরা হামলার শিকার হয়েছেন। মোতালেবের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলও করেছেন নদভীর সমর্থকেরা। এই ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেন মোতালেব। সেজন্য মনোনয়ন যাচাইয়ের সময় নদভী ও মোতালেব কি করেন সেদিকে সবার নজর ছিল।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ছিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষদিন। এইদিন বিকেল তিনটায় শুরু হয় চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। এই নিয়ে দুই পক্ষই বেশ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। বিশেষ করে নদভী সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বিশাল আইনজীবী প্যানেল। নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে এই প্যানেলে ছিলেন অন্তত ১২ জন আইনজীবী। অন্যদিকে মোতালেবের সঙ্গে ছিলেন দুজন আইনজীবী।

শুরুতে মোতালেবের দুজন আইনজীবী নদভীর জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের নানা খুঁত বের করেন। তাঁরা নদভীর ৯০ ভরি সোনার দাম শুধু আড়াই লাখ টাকা উল্লেখ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রে নদভী ৫০ ভরি স্বর্ণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তিনি অতিরিক্ত আরও ৪০ ভরি স্বর্ণ অর্জন করেছেন। কিন্তু সেই তুলনায় স্বর্ণের দাম কোনোভাবেই আড়াই লাখ টাকা হওয়ার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন মোতালেবের আইনজীবীরা।

এরপর ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান একটি পত্রিকায় নদভীর হলফনামা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে সম্মানি ও ভাতা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি দ্বাদশ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলের বরাতে বিদেশি অনুদান থেকে সম্মানি নেওয়ার বিষয়টি সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেন। তবে এই দাবির বিপরীতে পাল্টা যুক্তি দেখান নদভীর আইনজীবীরা। এভাবে চলতে থাকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তিতে জয় হয় নদভীরই। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নদভীর পক্ষেই ‘রায়’ দেন। জানান, সব কাগজপত্র বিবেচনা করে নদভীর মনোনয়নটি সঠিক বিবেচিত হয়েছে।

এরপর শুরু হয় মোতালেবের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। তাঁর ১ শতাংশ সমর্থক তালিকা থেকে দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত করা ১০ জনের মধ্যে দুজনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জেলা প্রশাসক। স্থানীয় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাইকালে ওই দুজন মোতালেবের পক্ষে স্বাক্ষর করেননি বলে জানান তিনি। তবে মোতালেব ওই দুই সমর্থককে সেখানে হাজির করলে জেলা প্রশাসক দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাই করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এই পর্যায়ে নদভীর আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, যে বিষয়টি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বারা যাচাইয়ের সময় মিমাংসিত হয়েছে সেটা এখানে আবার নতুন করে তোলার সুযোগ নেই। এ যুক্তির পর জেলা প্রশাসক শেষ পর্যন্ত মোতালেবকে নির্বাচন কমিশনারের কাছে আপিলের পরামর্শ দিয়ে তাঁর মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়ে দেন।

এরপর মিনহাজুরের মনোনয়নপত্রেও ওই এক শতাংশ সমর্থক নিয়ে প্রশ্ন উঠে। দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করা ১০ সমর্থকের মধ্যে ৭জনের বিষয়েই ভুল তথ্য উপস্থাপন করার কথা বলেন জেলা প্রশাসক। একই সময়ে নদভীর আইনজীবীরাও সৈয়দুল হক নামের একজনকে মোতালেব ও মিনহাজুর দুজনেই সমর্থক হিসেবে দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মিনহাজুর। শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়নটিও বাতিল করা হয়।

পুরো সময় নির্ভার দেখা গেছে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে। মূলত তাঁর হয়ে আইনজীবীরাই যুক্তিতর্ক করে যান। আর একসঙ্গে নদভীর ৪-৫ জন আইনজীবীর যুক্তিতর্কের সামনে মোতালেবের দুই আইনজীবী কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন। সে কারণে নদভীকে সেভাবে পাল্টা কিছুই বলতে হয়নি।

মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও নদভী বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষ আমার সঙ্গেই আছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমাকেই তাঁরা বিজয়ী করবেন।’

অন্যদিকে মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও হাল ছাড়ছেন না এম এ মোতালেব। জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে আপিল করবেন এবং আপিল শেষে তিনি মনোনয়নপত্র ফিরে পাবেন।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় নদভী ও মোতালেব-মিনহাজুর ‘লড়াই’ দেখা অনেকে বলছেন, ‘নদভী ঠাণ্ডা মাথার খেলোয়াড়। বরাবরের মতো এবারও তিনি পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে আইনজীবীদের নামিয়ে দিয়েছেন। নদভীর এই খেলায় অন্য প্রার্থীরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। সেজন্য নদভীর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো সেভাবে হালে পানি পায়নি। উল্টো অন্য প্রার্থীরা হয়েছেন কোনঠাসা।’

আজকের সারাদেশ/একে

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি