আজকের সারাদেশ ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে মনোনয়ন বাতিল হয়নি আওয়ামী লীগের কারো। তবে পরবর্তীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আপিল আবেদনের শুনানিতে প্রার্থিতা হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত অন্তত ৫ প্রার্থী। ঋণখেলাপি ও দ্বৈত নাগরিত্বের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রার্থিতা না-মঞ্জুর করেছে।
বরিশাল-৪ আসনে শাম্মী আহম্মেদ
দ্বৈত নাগরিত্বের কারণে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ দেবনাথ ইসিতে অভিযোগ করেন শাম্মী আহম্মেদ অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসি শাম্মী আহম্মেদের অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। পরে আপিল শুনানিতে ইসির কাছে শাম্মী আহম্মেদের দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
ফরিদপুর-৩ আসনে শামীম হক
দ্বৈত নাগরিত্বের অভিযোগে বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ছিলেন। শামীম হকের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
শামীমের এই মনোনয়নের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। তিনি ইসিতে অভিযোগ আনেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসেরও নাগরিক।
তবে শামীম হকের দাবি, তিনি নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করার তথ্যপ্রমাণ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন বলেও দাবি তার।
পরে শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে দূতাবাসের কাছে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। তবে আপিল শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবী নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে না পারায় তার মনোনয়ন বাতিল করে ইসি।
কক্সবাজার-১ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেছিলেন সালাহ উদ্দিন। তবে তার আবেদন না-মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। ফলে সালাহ উদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিলই থেকে যায়।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম।
এছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির ১২ দলীয় জোট থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম।
ময়মনসিংহ-৯ আসনে আব্দুস সালাম
ঋণখেলাপির দায়ে ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালামের প্রার্থিতা বাতিল করেছে ইসি। যদিও আব্দুস সালামের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে তার মনোনয়নের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেন আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে তিনি এবারে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন খান ইসিতে আপিলে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংকে ২৮ কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ আনেন। আব্দুস সালাম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন।
যশোর-৪ আসনে এনামুল হক
ঋণখেলাপির অভিযোগে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের (বাবুল) মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ইসি। অবশ্য এনামুলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন একই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল। তিনি এনামুলের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ তোলেন।
নির্বাচন কমিশন আপিলের শুনানি শেষে ঋণখেলাপির কারণে এনামুলের প্রার্থিতা বাতিল করে। তবে এনামুলের আইনজীবী হারুনুর রশিদ খান সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন
আজকের সারাদেশ/১৬ ডিসেম্বর/এএইচ