সকাল ১০:২৮, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম- ১৫ আসনে একাট্টা আ’লীগ, ‘হঠাৎ পাওয়া’ রাজত্ব হারানোর শঙ্কা নদভীর

আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেবেন প্রার্থীরা। তবে এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন আসনে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী নানা হিসেব-নিকেশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল হিসেবে এবার নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর জন্য হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম-১৫ আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের কারণে ‘হঠাৎ পাওয়া’ রাজত্ব হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। সংসদ সদস্য থাকাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর না নেওয়া, বিএনপি-জামায়াতের লোকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়াসহ নানা কারণে তার বিরুদ্ধে একাট্টা তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাছাড়া টানা দুই মেয়াদে এই আসনের সংসদ থাকা অবস্থায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ নদভীর বিরুদ্ধে। বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) থেকেও নানা অযুহাতে বিধিবহির্ভূতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি সামনে আসার পর নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দারুণ বেকায়দায় পড়েছেন দুই বারের এই সংসদ সদস্য।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় নদভীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) থেকে নদভী বছরে মিটিং ও সম্মানিসহ ভাতা পান ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নিয়েছেন ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীসহ নদভীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানটি থেকে বছরে ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ টাকা পান। হলফনামায় নদভী নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদ থেকে বছরে ২৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা পান। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, নদভীর বর্তমানে নগদ টাকা রয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪১ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ২০ লাখ ২১ হাজার ২৪৬ টাকা। নদভীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৯৫ টাকা। নদভীর ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার ৯৯৪ টাকা। নদভীর স্ত্রী রিজিয়ার নামে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৬ টাকা এবং ডিপিএস রয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮ টাকা।

নদভীর বর্তমানে গাড়ি রয়েছে ৩টি, যেগুলোর বাজারমূল্য ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ১৬৬ টাকা। নদভীর নিজের রয়েছে ৯০ ভরি স্বর্ণ এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ৫০ ভরি। নদভীর ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ৪ লাখ টাকার, আসবাবপত্র রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

তবে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় আবু রেজা নদভী তার মোট সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩০ টাকা । সেসময় তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর নামে অস্থাবর সম্পদ দেখান ১৯ লাখ টাকা ২৪ হাজার ৭৩৯ টাকার।

নির্বাচনে কমিশনে জমা দেওয়া এই দুই হলফনামার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গেল পঁচ বছরে নদভীর সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণ। আর তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিনগুণ।

নদভী ও তার স্ত্রীর সম্পদের এমন জগাখিছুড়ি হিসেবে নড়েচড়ে বসেছে দুদক। তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে তৎপর হয়ে ওঠেছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে নির্বাচনী মাঠেও কোনঠাসা নদভী। ২০১৪ সালের পর টানা তিন মেয়াদে নৌকা বাগিয়ে নিলেও এখনও জামায়াতে ইসলামীর ট্যাগ মুছতে পারেননি এই সাংসদ। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেল দুই সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে কাজ করলেও এবার বদলে গেছে পরিস্থিতি। দলের কেন্দ্রীর নেতারা কৌশলের অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে সতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে ইতিবাচক কথা বলায় সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেবের পক্ষে মাঠে নেমেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয় এবার নদভীর শক্ত প্রতিদন্ধী হিসেবে মাঠে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান। সব মিলিয়ে এবার জামায়াত পন্থী নদভীকে হঠাতে একাট্টা হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার বিরোধ দীর্ঘদিনের। ২০১৪ সাল থেকে পরপর দুবার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েও তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন না। বরং আওয়ামী বিরোধীদের নানা সুযোগ সুবিধা দিতেন। তাই এবার দুই উপজেলার সবাই এক হয়েছে। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও মোতালেব সাহেবকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে বলেছেন।’

আজকের সারাদেশ/১৬ডিসেম্বর/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি