আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির চেয়ারম্যানকে সমর্থন দেওয়ার খবরে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এখনও নৌকায় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পক্ষে পুরোদমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের দাবি, ‘ব্যক্তির ফোন’ – এ আওয়ামী লীগের মত বড় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে না। আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা নৌকার প্রচারণা চালিয়ে যাবেন।
টানা দুই মেয়াদে বেহাত থাকার পর এবার মনোনয়ন পেয়েও হাতছাড়া করতে রাজি না কেউ। নৌকার প্রচারণার মাঝ পথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের খবরে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ছাড়াও উপজেলায় ক্ষুব্দ ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির আশা, দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্ত মেনে ‘একতার ‘য় ফিরবেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তবে এই আসনে (ফটিকছড়ি) দলীয় মনোনয়নে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়ায় আর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন নেই বলে দাবি জেলা আওয়ামী লীগের। তাদের মতে, মোবাইল ফোনে দলের সাধারণ সম্পাদকের জানানো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
ট্টগ্রামের একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও ২৮ ডিসেম্বর জেলা-উপজেলার নেতাদের ফোন করে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কথা জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগের দিন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। একতারা প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ফটিকছড়ি আসনে সুপ্রিম পার্টিকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া খবরকে গুজব দাবি করে ২৮ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। সেই সমাবেশে জেলা পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের ঘন্টা দুয়েক পরই জেলা-উপজেলার নেতাদের কাছে ফোন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রের এমন সিদ্ধন্তের পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিক চিঠি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। শনিবারও অনেকটা একই কথা বললেন তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে আছে, প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা বসে যেটা সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই বাস্তবায়ন হবে। এটা একটা নির্বাচন, এখানে ব্যক্তি পর্যায়ে কথা বললে তো বাস্তবায়ন হবে না।’
‘অফিসিয়ালি (আনুষ্ঠানিকভাবে) এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি। নেতারাও আমাদের এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। ওনারা বৈঠকে আছে, আমরা তো মাঠে আছি। মাঠ ছেড়ে দিতে পারব না। আমাকে ফোন করে দিলে কোনো প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে? আনুষ্ঠানিক বিষয় আছে, এখানে বিরাট কর্মযজ্ঞ। ৫ তারিখ আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ, তাহলে তো মাত্র ৫ দিন আগে। ৫ দিনে যদি কেউ এমপি হয়ে যেত পারত তাহলে তো বাংলাদেশে আর কেউ কাজ করত না।’
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানের মধ্যেও সুপ্রীম পার্টির আশা দ্রুতই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মেনে একতারায় ফিরবেন উপজেলার নেতাকর্মীরা। সুপ্রীম পার্টির মুখপাত্র আজমাইন আসরার বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) দলের উচ্চ মহল থেকে একটা আদেশ আসছে, তারা পালন করবে কি করবে না এটা তাদের বিষয়। আমরা আমাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের হয়ত কিছু সময় দরকার, তারা হয়ত কোনো সিদ্ধান্ত নিবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে একটা আদেশ আসছে, আমরা আশা করছি তারা এটা মেনে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিবে।’
খাদিজাতুল আনোয়ার সনির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াও জেলা-উপজেলার নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। সেই বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘এটা জেলা-উপজেলার বিষয় না, এটা আমাদের মতামতের ভিত্তিতে হয় না। আনুষ্ঠান চিঠি বা ঘোষণার দরকার নেই, কারণ প্রার্থীকেও নিশ্চয় বলা হয়েছে, আর উপজেলার সেক্রেটারীকেও বলা হয়েছে। তাই লিখিত চিঠি আসতে হবে বা, আনুষ্ঠানিক বিষয়াতি এখানে প্রযোজ্য নয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক কথা বলেছেন, সেখানে আনুষ্ঠানিক বিষয় আমি গুরুত্বহীন মনে করি। এখন উপজেলা আওয়ামীলীগ যদি কেন্দ্রকে অগ্রহ্য করে সেটা কেন্দ্রের ব্যাপার।’
এদিকে নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক আগে প্রার্থী পরবর্তনের খবরে ক্ষুব্ধ উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। সবাই নৌকায় মনোনয়ন পাওয়া খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রচারণায় আছি। নৌকার পক্ষে সনি আপুর হয়ে কাজ করছি। কে কী বললো তাতে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা নৌকাকে জয়ী করার জন্য কাজ করে যাব।’#
আজকের সারাদেশ/৩০ডিসেম্বর/এএইচ