সকাল ৬:৫২, শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষামন্ত্রীর আগমনে চবির একদিনের ব্যয় সাড়ে ৬৭ লাখ টাকা

আজকের সারাদেশ ডেস্ক:

গেল বছরের ৪ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নবনির্মিত মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেদিন শিক্ষামন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে চবি কর্তৃপক্ষ খরচ করেছে প্রায় সাড়ে ৬৭ লাখ টাকা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দপ্তরের কিছু নথি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে এলে এমন অস্বাভাবিক বিল দেখানোর বিষয়টি সামনে আসে। পরবর্তীতে এমন ভুতুড়ে বিল তৈরির বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে নানা সমালোচনা।

তিন খাতের মধ্যে—বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ভিসি কার্যালয়ে নতুন এক সেট সোফা (শিক্ষামন্ত্রীর বসার জন্য) ক্রয়ে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৯ টাকা। এরমধ্যে বড় দুইটি খরচের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দফতরের নথিপত্রে দেখা যায়, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের একাডেমিক ভবন উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ভিসির নির্দেশে দুই দফায় টাকা নিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার। প্রথম ধাপে ৩৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেন। আর দ্বিতীয় ধাপে মূল্যবৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে নেন আরও ১১ লাখ টাকা। আয়োজক কমিটির সদস্যদের মতে, খাওয়া ও আপ্যায়ন বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া আলোকসজ্জা, ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাদক দল ও আতশবাজিতে খরচ হয়েছে ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ভ্যাট দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি নথিপত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের জন্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এ সেমিনারে ভিসি ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী (বর্তমানে সমাজকল্যাণমন্ত্রী) ডা. দীপু মনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামককে দেওয়া চিঠিতে খরচের খাত হিসেবে প্রক্টর উল্লেখ করেন, সেমিনারের মঞ্চ ও প্যান্ডেল সাজানোর জন্য ৪ লাখ, শব্দ ব্যবস্থার জন্য ২ লাখ, ব্যাক গ্রাউন্ড সজ্জা ও এলইডি স্ক্রিনে ২ লাখ, আপ্যায়নে ৮ লাখ, শৃঙ্খলায় ৮০ হাজার, তথ্য ও প্রচারে ৫০ হাজার আর সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয়তে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসে প্রেরিত ভিসি দফতরের উপরেজিস্ট্রার এস.এম. ফোরকান সই করা এক চিঠিতে দেখা যায়, একই দিন শিক্ষামন্ত্রীর ভিসি কার্যালয়ে অবস্থান ও বাংলোতে মধ্যাহ্নভোজ উপলক্ষ্যে চবির ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ এর ‘গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের আসবাবপত্র ক্রয় খাত’ হতে দুই সেট সোফা ক্রয়ের জন্য ভিসি মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

একই ব্যক্তির সই করা আরেকটি চিঠিতে দেখা যায়, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আগমন উপলক্ষ্যে ভিসি মহোদয়ের অফিসের সোফা ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ ১৬ হাজার ২১৬ টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়। এতে ভ্যাটসহ সর্বমোট ব্যয় হয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৯ টাকা।

এসব অতিরিক্ত খরচ দেখানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, বর্তমান প্রশাসন সব দিক দিয়েই ব্যর্থ। তাদের অন্যায় অনিয়মের কথা বলে শেষ করা যাবে না। যেখানে অর্থসংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেখানে এসব অস্বাভাবিক খরচ খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।

 এর আগে এসব বিষয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন (ইউজিসি) চবি প্রশাসনের কাছে খরচের খাত জানতে চায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদারের কাছে জানতে চাইলে ‘ইউজিসিকে হিসাব দিয়েছি’ বলে তিনি পাশ কাটিয়ে চলে যান।

এমন আয়োজনে এত টাকা খরচের কোনো বৈধতা আছে কিনা জানতে ইউজিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের দায়িত্বে থাকা সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

চবিতে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে একটি ভবন। এতে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, ফিশারিজ ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক অবকাঠামোর সুবিধা রয়েছে। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি টাকা। নির্মাণ শেষে গত এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ বুঝিয়ে দেন ঠিকাদার। পরে গত বছরের ৪ জুন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর উদ্বোধন করেন।

আজকের সারাদেশ/১৮জানুয়ারী/এএইচ

সর্বশেষ সংবাদ

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চবি, রাতের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ

কত টাকা পেল কোপা ও ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা-স্পেন?

ঢাবিতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৮২, মেডিকেলেও হামলা

চবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় চলছে ছাত্রলীগের হামলা

‘যৌতুক’ হিসেবে হবু জামাইকে বিসিএসের প্রশ্ন দিয়েছিলেন পিএসসি সদস্য

শখের বসে ৩০ বছর ধরে কাচের বাল্ব চিবিয়ে খান রাজশাহীর মুক্তার

নাটোরে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়া কয়েক কেজি গাঁজা নিয়ে মানুষের কাড়াকাড়ি

নির্বাচনী সমাবেশে প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি

স্বঘোষিত মেধাবীরা কি বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য বুঝে না: ছাত্রলীগ সভাপতি

আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা করলে পরিণাম ভালো হবে না: ছাত্রলীগ সেক্রেটারি