আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে আগেই। দুজনেই এখন নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই ৭ বছরের মোহাম্মদ সালমানের ঠাঁই হয়েছিল মামার বাড়িতে। সেখানে নানী আর মামীদের কাছে বড় হচ্ছিল মানসিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুদ্ধ করা শিশুটি। মা-বাবার আদর, ভালোবাসা আর স্নেহবঞ্চিত সালমান তার দায়িত্ব নেওয়া থেকে এবার সবাইকে ‘মুক্তি’ দিয়ে দিল। আগুনে পুড়ে দগ্ধ হয়ে কষ্ট পেতে পেতে মারা গেছে শিশুটি।
সালমানের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের হাদির পাড়া এলাকায়। সালমানের স্বজন আর স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটার দিকে অন্যান্য দিনের মতো কম্বল মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল সালমান। তখন তার নানী পাশের আরেকটি ঘরে একটা কাজে যান। এর মধ্যেই মশার কয়েল থেকে আগুন সালমানের কম্বলে লেগে যায়। কম্বল থেকে আগুন পাশে থাকা লাইটারে লাগলে সেটি বিস্ফোরণ ঘটে। তখন মুহূর্তেই আগুন সালমানের পুরো শরীরে ধরে যায়। ঘুমের মধ্যেই তার শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে যায়।
সালমানের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগীতা করেন স্থানীয় তরুণ জয়নাল আবেদিন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সালমানকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে শিশুটি মারা যায়। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।’
জয়নাল আবেদিন আরও বলেন, ‘সালমানের মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে বহুদিন আগে। সে নানীর কাছেই বড় হচ্ছিল। জন্ম থেকেই দুঃখের সঙ্গে বড় হওয়া মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুটি এভাবে কষ্ট পেয়ে মারা গেল, মানতে পারছি না।’
সালমানের মৃত্যুর পর তাকে শেষবারের মতো দেখতে গ্রামের বাড়িতে ছুঁটে এসেছেন বাবা আর মা। সালমানের পোড়া শরীর দেখে তাঁদের চোখে নেমেছে জলের ধারা। স্বজনদের কেউ কেউ এসে সেই জল মুছেও দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কি আর সালমানকে একটা স্বস্তির শৈশব দিতে না পারার দায় মুছবে?
আজকের সারাদেশ/একে