আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
আদালতের আদেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কার্যালয়ে ঢুকে দায়িত্ব নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ওয়ার্ডের বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে। বাদ্য-বাজনার তালে তালে কার্যালয়ে ঢোকার পর তাঁকে সংবর্ধনাও দেন অনুসারীরা। পরে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে চেয়ারেও বসেন। জসিম সদলবদলে কার্যালয়ে প্রবেশ করায় ওই ওয়ার্ডে ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলের দায়িত্ব পাওয়া সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আমিন আর যাননি। তিনি এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিমের কাছে অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোড়া ও হুমকি দেওয়ার মামলায় অভিযোগপত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরুল আলমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। সেই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর ২৪ জানুয়ারি বরখাস্তের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. আব্দুর রাফিউল আলমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী তাঁকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
পরে এই আদেশের বিষয়ে আদালতে রিট আবেদন করেন জসিম। জসিমের করা রিটের প্রেক্ষিতে আদালত রুল অ্যান্ড স্ট্যাটাস কো আদেশ দিয়েছেন। আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে বরখাস্তের আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানাতে বলেছেন। তবে জসিমের বরখাস্তের আদেশটি স্থগিত করেননি আদালত। এই বিষয়ে স্ট্যাটাস কো দিয়েছেন। অর্থাৎ রিটের পূর্বে যে আদেশ ছিল তা বহাল বা স্থিতাবস্থা থাকবে। সে অনুযায়ী জসিমের বরখাস্তের আদেশ বলবৎ থাকছেই।
কিন্তু মন্ত্রণালয়ের আদেশ-প্রজ্ঞাপন ও আদালতের আদেশ অমান্য করে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নিজ দায়িত্বে কার্যালয়ে বসা শুরু করেছেন জসিম। ব্যান্ড পার্টি নিয়ে উৎসব করে তিনি কার্যালয়ে ঢোকেন। এ নিয়ে তাঁর অনুসারীদের মধ্যেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। অনেকে ‘ওয়েলকাম ব্যাক’ লিখে কার্যালয়ের ভেতরে জসিমের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিচ্ছেন। পাশাপাশি একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ফুল দিয়ে জসিমকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে মোনাজাতের পাশাপাশি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়। এরপর কাউন্সিলর হিসেবে জসিম বিভিন্ন কাগজপত্রে সইও করেন।
জসিমকে সাময়িক বরখাস্তের পর ওই ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয় ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আমিনকে। জানতে চাইলে নুরুল আমিন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে আমাকে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে আমি মাঝে মাঝে সেই ওয়ার্ড কার্যালয়ে যেতাম। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে ফেসবুকে দেখছি বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর সাহেব অফিসে এসেছেন। উনি আসায় আমি আর যাইনি। আমি কোনো দ্বন্দ্বে যেতে চাই না।’
বিষয়টি মেয়রকে জানানো হয়েছে জানিয়ে নুরুল আমিন আরও বলেন, ‘আমি মেয়র মহোদয়কে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন ‘‘ও (জসিম) পাগলামি করছে, ও এখন কোনোভাবেই বসতে পারেন না এখন। আদালত যে আদেশ দিয়েছে (স্ট্যাটাস কো) তার বিষয়ে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি শুনানি হবে। সেই শুনানিতে তিনি (জসিম) যদি জেতেন তাহলে পুনরায় দায়িত্ব নিতে পারবেন, আর হারলে পারবেন না।’’ কিন্তু তাঁর আগেই তিনি দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছেন।’
তবে মো. জহুরুল আলম জসিম দাবি করেছেন বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে কাউন্সিলর পদে বহাল রেখেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আমি পুনরায় দায়িত্ব নিয়েছি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৯নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিষয়ে আদালত একটি আদেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি। আমি এখনো সেই আদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আমি এই বিষয়ে আলাপ করব।’
বেলার প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বেলার একটি প্রতিনিধিদল গত বছরের ২৬ জানুয়ারি আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জসিম ও তাঁর সহযোগীদের মারমুখী আচরণের শিকার হন। এ ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আকবর শাহ থানা-পুলিশ গত বছরের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে অভিযোগপত্রে কাউন্সিলর জসিমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন জসিমের সহযোগী বিল্লাল হোসেন, আবু নোমান, সাইফুদ্দিন ভূঁইয়া, আনিছ চৌধুরী ও মো. শাকিল। তাঁদের মধ্যে নোমান ছাড়া বাকিরা জামিনে আছেন।
আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহেদ উল্লাহ জামান। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পাহাড় কাটা এলাকা পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জহুরুল আলমের নেতৃত্বে আসামিরা বেলার প্রধান নির্বাহীসহ প্রতিনিধিদলকে বাধা দেয়, গাড়ি আটকে রাখে ও বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। আটকে রাখা সেই গাড়ি পুলিশ গিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।
আজকের সারাদেশ/একে