বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
মাধ্যমিকের গণ্ডি অতিক্রম করেননি। পরিচয় দেন সাংবাদিক হিসেবে। রয়েছে মাদক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা। দোকান থেকে বাজার-সদাই করে দেন না টাকা। টাকা চাইলে ব্যবসায়ীদের দেন মামলার হুমকি। এমন এক সাংবাদিকের নাম নজরুল ইসলাম ওরফে পেডান।
অভিযোগ আছে, সিএনএন বাংলা টেলিভিশন নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বাঁশখালী প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) এর বাঁশখালী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নজরুল ইসলাম ওরফে পেডান। এর আগে বিভিন্ন সময় বাঁশখালীর শেখেরখীল ইউনিয়নের মৌলভীবাজারে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিকালে গণপিটুনির শিকার হলেও ক্ষান্ত হননি তিনি।
শেখেরখীল মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, আমি একজন মুদি দোকানী। পেডান আমার দোকান থেকে বাজার-সদাই করার পর আমি পাওনা টাকা চাইলে আমাকে মামলার হুমকি দেয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাজারের ১৩৯ জন ব্যবসায়ী।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবাধে চাঁদাবাজির অভিযোগে নজরুল সিকদার প্রকাশ পেডান এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলার মৌলভী বাজার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীরা।
মৌলভীবাজারস্থ সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ জাহান হাবীব।
লিখিত বক্তব্যে মৌলভী বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দানকারী চাঁদাবাজ নজরুল সিকদার প্রকাশ পেডান একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। সে মদ পান করে মাতলামি করে। বাজারের ক্রেতা সাধারণকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে টাকা ছাড়া মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনের মতো গত বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভী বাজারের ব্যবসায়ী শাহজাহানের নিকট চাঁদা দাবি করে। শাহজাহান চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় শাহজাহানের চায়ের দোকানে থাকা কড়াইয়ের তেল মাটিতে ফেলে দিলে উত্তেজিত সাধারণ ব্যবসায়ী ও জনতা একত্রিত হয়ে মারধর করে। পরে তাকে ধরে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার নজরুল ইসলাম ওরফে পেডানকে কল দেওয়া হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
বাঁশখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, বাঁশখালীতে দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রেসকার্ড ব্যবহার করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নজরুল ইসলাম। তার এই কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পেশাদার সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। পেশাদার সাংবাদিকদের লেখা প্রকাশিত নিউজ কপি করে অনলাইন বা নামমাত্র পেইজে নিজের নামে প্রচার করছে। সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, মোবাইল ফোনে হুমকি, অবৈধ ব্যবসা ও বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে।
বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার বলেন, উত্তেজিত জনগণ পুলিশ যাওয়ার আগেই নজরুলকে মারধর করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। এখনোও পর্যন্ত সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। আমরা তার স্বজনকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। অপরাধ করলে তো দেশে আইন আছে। এভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে তাকে মারধর করা ঠিক হয়নি। এখনোও পর্যন্ত বাজার কমিটি আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকের সারাদেশ/একে