আজকের সারাদেশ প্রতিবেদন:
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৯৯ জনই ব্যবসায়ী। সে কারণে ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে কোনো কথা আসলেই মন্ত্রী, এমপি, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিতদের কণ্ঠে শোনা যায় ব্যবসায়ীরা লোকসান দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বলার লোকের সংখ্যা বেশি হলেও ভোক্তাদের পক্ষে বলার সংখ্যা ক্রমাগত কমছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা কমিটির নেতাদের বিভাগীয় সম্মেলনে বক্তদের কথায় এই বক্তব্য উঠে এসেছে।অথচ সামান্য ডিমে কিছু ব্যবসায়ী ৪ টাকা করে অতিরিক্ত মুনাফা নিয়ে প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারও কোনো বক্তব্য নেই।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জমান। বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ ড. অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদ প্রমুখ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজউল্যাহ, জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতারও সভায় উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৭০ জন ক্যাব নেতা ও প্রতিনিধি অংশগ্রহন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জমান বলেন, ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্যাবকে জাতির প্রত্যাশা পুরণে আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যে কোনো নাগরিক ভোগান্তি ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হলেই ভোক্তাদের পাশে দাড়ানো ও তাদের পক্ষে জোরালো কর্মসুচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণদের মাঝে স্বপ্ন দেখাতে হবে। যেখানে মানুষের ভোক্তা অধিকার লংগনহনিত ঘটনার প্রতিকার দ্রুত হবে। দেশে ভোক্তাদের মাঝে আরও সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের বৈষম্য কমানো যাবে না।
অন্যদিকে ক্যাবের নেতারা বলেন, ‘চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও রমজান উপলক্ষে সরকার ৪টি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোয় কিছু ব্যবসায়ী বলে উঠলেন তাদের লোকসান হচ্ছে। আর তাঁরা এতদিন মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে মানুষকে ফতুর করে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তাদের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। তাই ক্যাবকে সাধারণ মানুষের কন্ঠস্বর হয়ে সাধারণ জনগনের ভোগান্তি, হয়রানি ও মনোবেদনার কথা সরকারের নজরে আনতে আরও শক্তিশালি করতে এবং ভোক্তাদেরকে সংগঠতি করতে উদ্যোগী হতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে সম্ভাবনার কথা, স্বপ্নের সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখাতে না পারলে বিপুল সংখ্যক মেধাবী তরুণ বিদেশমুখী হয়ে যাবে।
ক্যাবের জেলা পর্যায়ের নেতারা মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। বিভাগের অনেক জেলায় জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা নাই। যেখানে জেলায় একজন কর্মকর্তা দিয়ে সামাল দেওয়া কঠিন, সেখানে একজন কর্মকর্তা দুই জেলার দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে লোকবল দেয়া না হলে ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা ঠেকানো যাবে না। একই সঙ্গে তৃণমুল পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার শিক্ষা ও সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো না হলে পুরো দেশ ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পৃষ্ঠ হয়ে যাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠাপোষকতা বাড়াতে হবে। কারন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি সরকারের নানা সুবিধা ও প্রণোদনা পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে, সেখানে ক্যাব এখনও ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ আর কত কাল তাড়াবে’
আজকের সারাদেশ/এমএইচ